মুক্তঝরা হাসি, মোনালিসার রহস্যময়ী হাসি, ভূবনভোলানো হাসি কিংবা অট্টহাসি- হাসির প্রকারভেদ মনে হয় বলে শেষ করা যাবে না।
প্রতিনিয়ত আমরা নানা ঘটনার আড়ালে-অন্তরালে অথবা মনের অজান্তেই হেসে থাকি।
যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লোমালিন্ডা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ লোরেন্স বার্ক হাসি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
বার্কের মতে, হাসি মানুষের উদ্বেগ বাড়ানো হরমোনের ‘ করটিসোল’ নিঃসরণ কমায় যা মানুষকে উদ্বেগমুক্ত করে।
রক্তে রোগ প্রতিরাধ বৃদ্ধি করতে নির্মল হাসির জুড়ি নাই। তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ সেকেন্ড অর্থাৎ দিনে ৬মিনিট করে হাসতে পারলে আমাদের বুক, কাঁধের মাংসপেশী সঙ্কুচিত-প্রসারিত হবে এবং থাকবে নিরুদ্বিগ্ন ও প্রফুল্ল।
অনাবিল হাসি আক্রমনাত্মক একগুঁয়ে ভাব আর ক্রোধান্বিত স্বভাবকে বদলে দিতে পারে, এছাড়া হার্টএটাকের ঝুঁকিও কমায় ।
বিজ্ঞানীরা নিয়মিত স্লোগান দিচ্ছেন “প্রাণ খুলে হাসুন, সুস্থ থাকুন”।
উইলিয়াম জেমসের মতে, যারা বেশি হাসে তারা আসলে দীর্ঘজীবী হয়। এ সম্পর্কে ডারউইন বলেন পশুরা কাঁদতে পারে, চিন্তিত হতে পারে কিন্তু হাসতে পারে না।
মানুষের হাসি শুধু সুস্বাস্থের জন্য ভাল তা নয় নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশেও হাসি এক ধরনের সহায়ক মাধ্যম । সুন্দর হাসিমাখা মুখ পরিবেশকে যেমন নমনীয় করে তোলে তেমনি হসিমাখা মুখের চাহনি অন্যকেও হাসতে আকৃষ্ট করে । এ জন্যই ইউরোপের মনস্তত্ববিদগণ ব্যাক্তিত্ব পরিমাপের জন্য রোগীর সাথে কৌতুক করে থাকেন । জোসেফ এডিসন বলেছেন, সব সৃষ্ট জীবের মধ্যে হাসির দিক দিয়েই কেবল মানূষ পৃথক । এখন কথা হচ্ছে মানুষ হাসে কেন ? উত্তর হচ্ছে বোধ শক্তি আছে বলেই অর্থাৎ নির্বোধ নয় বলেই মানুষ হাসে। বার্গসর্ন বলেন , মানুষের হাসি একটি সহজাত প্রবনতা । জীবনকে যে হালকা ভাবে নেয় সে হাসিকেও গ্রহন করে। জীবনকে যে মানুষ গভীর ভাবে দেখে সে কখনও হাসতে পারেনা । এই সংগা মেনে নিলে স্বীকার করতেই হবে, হাসি আসলে মানবিক একটা ব্যাপার ।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জি. ভিলেজটাইন বাচ্চাদের হাসির ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, শিশু জন্মের এক সপ্তাহ পরেই শিশু হাসে। তবে বেশির ভাগ শিশু তিন মাস পর হাসে । হাসি শারীরিক প্রবণতা ।
কারণ, হাসির সময়েই শরীরে এক ধরনের পুলক অনুভব হয় । মার্ক টোয়েলের মতে প্রাণ খুলে হাসির পরেই মানুষ তার সমগ্র অস্তিত্বে নতুন শিহরণ অনুভব করে । মনস্তাত্বিক হাইনজন বলেন, মানুষ একটা শূন্যতাকে অন্য শূন্যতা দিয়ে পূরণ করার সময় তার মধ্যে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় তার ফলেই মানুষ হাসে।
আনন্দ মানুষকে এমন এক স্তরে পৌঁছে দেয় যেখানে নিজের অজান্তেই মানুষ নিজেকে বড় মনে করে । এই কল্পনা সমন্বিত রূপই হাসি।
শুধু হাসির জন্যই বিশ্বের অনেক দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ছোট বড় নানা স্বুল। যেখানে রয়েছে ছেলে বুড়ো বিভিন্ন বয়সী মানুষের যাতায়াত।
সবারই কম বেশি দুঃখ থাকবে এটাই স্বাভাবিক । এটা মেনে নিয়েই তো আমাদের চলতে হচ্ছে । তাই ছোট এই জীবনটাতে দুঃখ-কষ্টকে কিছুটা আড়ালে অন্তরালে রেখে সুস্থ থাকার সহায়ক হাসি নামক মহাষৌধ কে সবাই লুফে নেই। আসুন নিজে ভালো থাকার জন্য এবং সবাইকে ভালো রাখার জন্য মন-প্রাণ খুলে হাসি এবং মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে অন্যকেও হাসাই ।