জারিন ও তাসিন। নতুন বিয়ে করেছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা জারিনের চাই মেরুন রঙের কাতান শাড়ি। পছন্দও হয়েছে একটা। দাম বিশ হাজার টাকার উপরে হলেও বেশি মনে হচ্ছে না তার।
মিষ্টি হেসে বললেন, ভাসাভিতে এসেছি কারণ এখানে সবসময় এক্সক্লুসিভ সব কালেকশন থাকে। ইন্ডিয়ার কিছু ভালো ব্র্যান্ডের শাড়ি থ্রি-পিছ আসে এখানে। আর বিয়ের পর প্রথম ঈদ। তাই একটু স্পেশাল। দামটা বেশি মনে হচ্ছে না। কারণ বোঝেনই তো, ভাসাভি একটু অভিজাতদের জন্য।
তবে দোতলায় ওঠার সময় এক নারীর সঙ্গে ৮-১০টি ব্যাগের কেনাকাটা দেখে মনে হয়েছিলো দাম আর কত হবে! কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া!
ভাসাভির দোতলা মূলত নারীদের জন্য। শাড়ি, থ্রি-পিছ, ফতুয়া,লেগিন্স, জুতা, পার্স,পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা সবই পাবেন। তবে দাম বেশ বেশিই মনে হতে পারে আমাদের অনেকের কাছেই। কিন্তু ক্রেতারা এটা জেনেই এখানে আসেন। অবশ্য কারণও আছে। দাম বেশি হলেও তারা এখানে পান অসাধারণ সব পোশাক।
পরীবাগ থেকে মায়ের সঙ্গে শপিং করতে আসা জারিন জানান, ভাসাভির শাড়ি, থ্রি-পিছ খুবই সুন্দর। কোয়ালিটিও ভালো। আর ডিজাইন একাধিক না হওয়ায় প্রতিবার আসি।
ঈদের এক্সক্লুসিভ হিসেবে ভাসাভি এবার নিয়ে এসেছে মেয়েদের গাউন। এছাড়া মাসাকালি, কুর্তি, সালোয়ার কামিজ, বিভিন্ন প্রকার শাড়িসহ এনেছে অঙ্গসজ্জার নানা গহনা।
একজন বিক্রমকর্মী জানালেন, গাউনের চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া মাসাকালি, কুর্তি বেশ চলছে। গাউনের দাম রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা। মাসাকালি ১৫-৪০ হাজার, কুর্তি ৬-১৫ হাজার টাকা পড়বে। সালোয়ার কামিজ ৪-১২ হাজার টাকা।
শাড়ি সেকশনে গিয়ে দেখা গেলো চোখ ধাঁধানো সব শাড়ি গায়ে জড়িয়ে রয়েছেন বিক্রয়কর্মী ও ক্রেতারা। পাশে থাকা মানুষটির ওকে বলার অপেক্ষায় তারা।
বিক্রয়কর্মী ফারুক হোসেন জানালেন, কাঞ্জিবরম কাতানের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া পিতমবরম কাতান, তসর, বেনারসিরও বেশ চাহিদা রয়েছে। আর অধিকাংশ শাড়িই ইন্ডিয়ার নামিদামি ব্র্যান্ডের। দাম পড়বে ১২ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মিসেস সেন এবং রিতুজ এর শাড়ি সবচেয়ে ভালো ও দামি।
শুধু তাই না, পার্স পাবেন ৫-১২ হাজার টাকায়। আনস্টিস থ্রিপিছ পাবেন ১৫-৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
তৃতীয় তলা ছেলেদের। মেয়েদের পাশাপাশি কেনাকাটায় কম পিছিয়ে নেই ছেলেরাও। এবার ঈদে লক্ষ্নৌ আদি (আরদি)পাঞ্জাবি এসেছে নতুন। দাম ২-৫ হাজার টাকা। ক্যাজুয়াল পাঞ্জাবি ১হাজার ৮৫০-৯হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি রয়েছে ১০হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
আরও রয়েছে শার্ট সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে ১৮ হাজার,প্যান্ট সাড়ে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার, টি-শার্ট ১-১১ হাজার, জুতা আড়াই থেকে ২০ হাজার, স্যান্ডেল আড়াই থেকে ১০ হাজার, ওয়ালেট সাড়ে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকায় পাবেন।
ধানমন্ডি থেকে আসা সাজ্জাদ ও সুশান কেনাকাটা করে বেজায় খুশি। ব্যাগ ভর্তি হাতে। জানালেন প্রতিবছরই এভাবে কিনি। আর ছবি তোলার পর আস্তে আস্তে সুশান পাশে এসে জানালেন, সাজ্জাদেরটা না, আমারটাই দিয়েন।
পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য রয়েছে কিডস জোন। এখানে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, টপস, স্কার্ট, থ্রি-পিছ পাবেন। দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
বিশেষ করে অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারার মানুষের কেনাকাটার প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে ভাসাভি ও ড্রেসিডেল। এ ফ্যাশন হাউস দু’টির পোশাকের দাম যেমন তুলনামূলক বেশি, তেমন সুন্দর ও অসাধারণ সব পোশাকের সমারোহ।
বনানী ১০ নম্বর রোডের মাথায় অবস্থিত ড্রেসিডেল প্রতিবারের মতো এবারও চেষ্টা করেছে নতুন কিছু করার। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে এবার তারা হলুদ রংকে প্রাধান্য দিয়েছে। গরমও অবশ্য এর একটি কারণ। গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি কাপড়ের পোশাককে গুরুত্ব দিয়েছে।
বেচাকেনাও ভালো বলে জানালেন ম্যানেজার ইনচার্জ অ্যানি।
তিনি জানান, লং কামিজ বেশি চলছে। সব বয়সীদের কথা মাথায় রেখে পোশাক বানিয়েছেন তারা। লং কাটিং, ফ্রক কাটিং এবং ফিস কাটিং কামিজ বেশি পছন্দ করছেন তরুণীরা।
তবে ওয়েস্টার্ন স্টাইল ফলো করা তরুণীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। টপস, লেগিন্স, টিউনিং বেশ পছন্দ তাদের।
বিশেষ আয়োজন হিসেবে ড্রেসিডেল এনেছে ফ্যামিলি ম্যাচিং পোশাক, মা-মেয়ে, বাবা-ছেলে একই রঙের, একই ডিজাইনের পোশাক পরে যেন ঈদের চমৎকার সময় কাটাতে পারেন তার জন্যই এ ব্যবস্থা বলে জানালেন অ্যানি।
সালোয়ার কামিজের দাম রেখেছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তসর, সিল্ক,কোটা,কাতানসহ বিভিন্ন শাড়ির দাম রেখেছে ২-৫০ হাজার টাকা। ক্যান্টনমেন্ট থেকে কেনাকাটা করতে আসা করবী জানান, ডিজাইনে নতুনত্ব ও অন্য ফ্যাশন হাউজ থেকে একটু আলাদা হওয়ায় এখানে আসেন।
টিনেজদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকায় প্রতিবার আসেন বলেও জানান তিনি।
অ্যানি বলেন, কোয়ালিটি এবং ডিজাইনে ভিন্নতা আনি বলেই আমাদের নিয়মিত কাস্টমারের সংখ্যা বেশি। আর ঈদ হওয়ায় এখন রাত ১২-০১ টা পর্যন্ত এ আউটলেটটি খোলা থাকে।
দাম বেশি আর অভিজাতদের জন্য হলে শখ মেটাতে কিন্তু আপনিও যেতে পারেন ভাসাভি-ড্রেসিডেলে।
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর