নানা ব্যস্ততায় অনেকদিন থেকে সবাই মিলে কোথাও যাওয়া হয়ে উঠছিলো না। শেষবার সবাই একসাথে ট্যুরে গিয়েছিলাম রাংগামাটি, বৈশাখ মাসের বিজু উৎসবে।
কেননা পাহাড়ে সবুজ দেখার এটাই শ্রেষ্ঠ সময় এছাড়া ঝর্ণাধারা দেখতে হলে তো বর্ষার বিকল্প নেই। প্রথমদিকে সবার সাড়া বেশ ভালো থাকলেও নানা ব্যস্ততায় শেষ পর্যন্ত আমাদের দল ছয় জনে গিয়ে ঠেকলো। ট্রেন ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও টিকেট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাসেই টিকেট কাটতে হল।
নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবাই কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে একত্রিত হলাম। ১১টায় বাস ছাড়লো। বাসে হুলস্থুল করতে করতেই আমাদের যাত্রা শুরু হল।
পথিমধ্যে উজান ভাটি রেস্টুরেন্টে থামলো বাস। সেখানে চা নাস্তা সেরে আবার গিয়ে বাসে উঠলাম। মাঝে ঘণ্টা দুয়েকের একটা ঘুম দিয়ে নিলাম। সকাল সাড়ে পাঁচটায় বাস সিলেট শহরে গিয়ে থামল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস থেকে নেমেই রাতারগুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। রাতারগুল যাওয়ার ২ টা পথের একটা হল জাফলংয়ের বাসে উঠে সারিঘাট হয়ে যাওয়া। আমরা সে পথেই রওয়ানা হলাম। সিলেট শহর ছাড়িয়ে জাফলং রোডে উঠতেই দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। ভোরের আকাশে দূরের পাহাড়ঘেরা নদীর সৌন্দর্য সবাইকে বিমহিত করেছিল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সারি ঘাট। সারি ঘাট নেমে আগে পেটপুজা সেরে নিলাম। সেখান থেকে সিনএনজি নিয়ে রওয়ানা হলাম গোয়াইন ঘাট। প্রায় আধা ঘণ্টার রাস্তা। ঘাটের কিছু দূর আগেই নামিয়ে দেয়াতে হাটতে হল কিছুক্ষণ। ঘাটে পৌছতেই প্রায় ৯টা বেজে গেলো। বনের ভেতরে ডিঙ্গি নৌকা ভ্রমণসহ ১২০০ টাকায় আপ-ডাউন রাজি করালাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগলো ইঞ্জিন নৌকায় বনের কাছে আসতে। সেখান থেকে ডিঙ্গি নৌকায় প্রবেশ করলাম বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলের ভেতর।
সোয়াম্প ফরেস্ট বলতে মূলত জলের উপর যেসব গাছ বেঁচে থাকে সেসব গাছ নিয়ে গড়ে ওঠা বন। বনের ভেতর কোনো গাছের নিচের অংশ ডুবে আছে পানিতে আবার একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো শরীরের অর্ধেকটাই ডুবিয়ে আছে। কোথাও কোথাও মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার হয়ে আছে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিচ্ছে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে পথ তৈরি করে এগুচ্ছি। গাছের পাতার ফাকে ফাকে মাঝে মাঝে বর্ণিল পাখির দেখা মেলে। শুনেছি রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। তাই সব সময়ই সতর্ক ছিলাম গাছের ডালে ঝুলে থাকা সাপের জন্য। যদিও সাপের দেখা মেলেনি। আরো কয়েক দল ট্যুরিস্টের সাথে দেখা হল বনে। হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো। গহীন বনে বৃষ্টির অনুভুতি ছিলো আসাধারণ। বনে ঘুরে বেড়ালাম প্রায় ঘণ্টা দেড়েক। তারপর আবার সেই গোয়াইন নদীতে এসে উঠলাম