বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত কিছুদিন ধরেই পরিবারের সবাই মিলে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছেন, হাতে কয়েকদিন সময়ও আছে।
জৈব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে অরুনিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমনি, হিমঝুরি, আসমানি, গগণদ্বীপ, উদয়ন প্রভৃতি। এসব পাহাড়ে সেগুন, গর্জন, কড়াই, কৃষ্ণচূঁড়া, সোনাল, কদবেল, পাম, ঝাউ, কাঠবাদামসহ নানা প্রজাতির গাছও রয়েছে। ৩৩৬ একর জমিতে রয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে সাপের মতো আকাবাকা হ্রদ। হ্রদে ভ্রমণের জন্য এখানে পাবেন মোটর বোট, স্পিড বোট,প্যাডেল বোট, ঐতিহ্যবাহী সাম্পান।
আপনি যখন বোটে চড়ে নৌভ্রণে যাবেন তার এক মিনিটও যেতে না যেতেই বিস্ময় ও আনন্দের শুরু হবে। সংরক্ষিত সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যাবে বুনো খরগোশ আর হরিণের ছুটে চলা, পানকৌড়ির জলে ডুব দেয়া, রঙ্গিন মাছরাঙ্গা ব্যস্ত মাছ শিকারে এসব দেখে মনে হবে এসেছেন বুঝি এক স্বপ্নপুরীতে যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
পরিবারের সকলকে নিয়ে নিরিবিলিতে দিন-রাত কাটানোর জন্য রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা- ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলো এই দু’ভাগে বিভক্ত। ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড লাগোয়া রিসোটের্ রয়েছে শীততপ নিয়ন্ত্রিত হ্রদমুখী ও পাহাড়মুখী কক্ষ যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতি ও আধুনিকতার সম্বনয়ে পাহাড়ের কোলে গড়ে তোলা ফয়’স লেক বাংলো অনন্য এক স্থাপনা, এখানে থাকলে মনে হবে আপনি থাকছেন বুঝি কোনো এক জনবিচ্ছিন্ন নিরিবিলি দ্বীপে।
বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু দেখা যাবে থোকা থোকা সবুজ, হ্রদের স্ব”ছ^ জলরাশি আর অবারিত নীল আকাশ। রিসোর্ট ও বাংলোয় আগত পর্যটকদের খাবার-দাবারের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখা হয় রেস্টুরেন্ট। বাংলোর নিরিবিলি পরিবেশে পহাড় ঘেঁষে বসে প্রকৃতিকে উপভোগের জন্য সাজানো গোছানো বসার স্থান এখানে থেকে শুধু শুনতে পাওয়া যায় পাখির ডাক আর রাত জুড়ে থাকে শুধু নিস্তবদ্ধতা। আগত দর্শনার্থীদের বিস্মিত করে তোলে ফয়’স লেকের দিন রাত্রির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। রিসোর্ট ও বাংলোয় আশপাশ ভরপুর নানা রকম গাছগাছালিতে।
সববয়সী মানুষের জন্য ফয়’স লেক কমপে¬ক্স এ গড়ে তোলা হযেছে বিনোদন কেন্দ্রের। আর্কষণীয় এই বিনোদন কেন্দ্র দু’ভাগে বিভক্ত-অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সাজানো হয়েছে আনেকগুলো রাইড নিয়ে। বড় ও ছোটদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাইডস। উলে¬খযোগ্য রাইডস্গুলোর মধ্যে সাকার্স ট্রেন, বেবি কেরাওসাল, কফি কাপ, পনি এ্যাডভেঞ্চার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ড্রাই স্লাইড, ফেরিস হুইল, এ্যপোলো ফ্লাইট ইত্যাদি।
ঝিকঝিক শব্দে চলা সার্কাস ট্রেন, বেবি কেরাওসালের নানা রং-এর ঘোড়ায় চড়ে মজা পায় বা”চার। ছোট-বড় কারও যদি ই”ছা মাটি থেকে অনেক উপড়ে উঠতে তাহলে উঠতে হবে ফেরিস হুইলে। বড়দের রাইড বাম্পার কারে চলে এক জনের গাড়ি নিয়ে আরেক জনের গাড়িতে ধাক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা। দেখে মনে হবে মজার যুদ্ধে নেমেছে সবাই।
এখানে রয়েছে সিঁড়ি বেয়ে ওপড়ে উঠার ব্যবস্থা, অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠলে দেখা যাবে অনন্য সুন্দর পিকনিক স্পট যা ফটো কর্নার নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে পানি ও ঠাণ্ডা পানীয়। ফটো কর্নার থেকে কিছু দূরের পথ এগুলেই দেখা যাবে অবজারভেশন টাওয়ার আর এখান থেকে দূরবীনের সাহায্যে দেখা যাবে পুরো চট্টগ্রাম শহর।
পিজন স্কয়ারে খাবার ছিটালে পার্কের কবুতরগুলো উড়ে এসে বসে দর্শনার্থীদের গায়ে। নৌ-ভ্রমণের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। কেউ চাইলে প্যাডেল বোট, ইঞ্জিন বোট কিংবা স্পীড বোট নিয়ে ঘুড়তে ঘুড়তে দেখতে পাবে সংরক্ষিত সবুজ আর নানা রকম বুনো প্রাণী। হ্রদের পাড়ের বোট স্টেশন কাছেই পাওয়া যায় কাবাব, চটপটি, ফুসকা সহ নানারকম মুখরোচক খাবার।
দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড ফয়’স লেক কমপ্লেক্স । বোট স্টেশন থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ডের। সারাদিন জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠার জন্য অনন্য এক স্থান। সারাদিন জল নিয়ে খেলার জন্য রয়েছে অনেকগুলো রাইডস। সি-ওর্য়াল্ডের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান ওয়েভ পুল, সাগড়ের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলা করে ওয়েভ পুলে। ওয়েভ পুলের সামনের স্টেজে হয় ডিজে শো। কৃত্রিম ঢেউ আর মিউজিকের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। ওয়েভ পুলে টিউবে অনেকেই ভেসে থাকতে মজা পায়। পাশেই ড্যান্সিং জোনে কৃত্রিম বৃষ্টি মন মাতানো মিউজিক আর রঙ্গিন বাতির আলোক ঝর্ণায় নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় অন্য কোনো জগতে। চিলড্রেন পুলে বাচ্চাদের পানিতে খেলার জন্য রয়েছে আর্কষণীয় অনেকগুলো রাইডস্।
দর্শনার্থীদের জন্য ফ্যামিলি পুল অন্যতম আর্কষণীয় রাইড এই রাইডে চড়লে খুব দ্রুত গতিতে নিচের পানিতে লাফিয়ে পড়ে। অন্যান্য রাইডগুলো হচেছ টিউব-স্লাইড, মাল্টি- স্লাইড, প্লে-জোন। পোশাক পরিবর্তনের জন্য পুরুষ ও নারীদের ভিন্ন ভিন্ন চেঞ্জিং রুম। সি-ওয়ার্ল্ডে খাবারের জন্য রয়েছে ফুড কর্নার ও আধুনিক রেস্টুরেন্ট তাই খাবার নিয়ে বাড়তি কোন চিন্তা নেই।
যতই শীত কাল ঘনিয়ে আসছে ফয়’স লেক কমপে¬ক্স এ পিকনিকের হৈ চৈ বেড়ে চলেছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু কিশোরদের চলে পিকনিক আয়োজনের ধুম। সবাই খুঁজতে থাকে একটি মনের মতো বিনোদন কেন্দ্রিক পিকনিক স্পট যা আমাদের দেশে সহজে খুজে পাওয়া কঠিন।
আধুনিক সুযোগ সুবিধা, নির্মল আনন্দ বিনোদন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ফয়’সলেক কমপে¬ক্স পিকনিকের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
বড়দের এন্ট্রিসহ সব রাইড ৩০০ টাকা।
ছোটদের জন্য এন্ট্রিসহ সব রাইড ২২০ টাকা।
আর রাত থাকতে চাইলে রুম এবং বাংলোভেদে খরচ হবে ৪০০০ থেকে ৮৫০০ টাকা।
ফয়’স লেকের সহকারী ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন বাংলানিউজকে বলেন, শহর জীবনের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি এবং নতুন করে কাজের উৎসাহ পেতে ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য সবচেয়ে মনোরম জায়গা হচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘেরা আমাদের বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক।
বন্ধুরা আরও নানা বিষয়ে জানতে ও আপনার মতামত জানাতে https://www.facebook.com/bnlifestyle