বেশিরভাগ সময় নিউজরুমে কাজ করার ফলে অনেকটা ঘরকুনো সংবাদকর্মীই হয়ে গিয়েছি। এবার যখন চট্টগ্রামে বাংলানিউজের পাঁচবছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ট্যুর লিস্টে নিজের নাম দেখলাম, তখনই এক কথায় রাজি।
আর একটি ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গাও রয়েছে, যাকে বলে রথ দেখা আর কলা বেচা। মানে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে চট্টগ্রামে। ওরা ওখানেই থাকে। প্রায় একবছর হয়ে গেছে কিন্তু আমি এখনও যাইনি। মনে হলো, এটাও একটা সুযোগ ওদেরকে দেখে আসার।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে আমরা ১৬ জনের একটি দল তূর্ণা-নিশিথায় যাত্রা শুরু করলাম। সহকর্মীদের সঙ্গে এটাই যেহেতু আমার প্রথম ট্যুর তাই আগ্রহটাও যেন একটু বেশি। আমাদের জন্য কয়েকটি বার্থ (এসি রুম) নেওয়া হলেও সবাই একরুমেই আড্ডা দিলাম প্রায় সারা রাত। মজার মজার সব খাবার ছিলো ডেপুটি অ্যাডমিন ম্যনেজার সুলতানা জাহান শিমুর কল্যাণে। হিমু, উর্মি, পাপড়ি, নয়ন, রিপার জোকস আর গানে গানে সারাটা পথ বেশ কেটে গেলো।
দীর্ঘ পথে নজর কাড়লো রাস্তায় ঘুমানো মানুষ। স্টেশনের পাশের ছোট ছোট চা-চিপসের দোকানগুলো দেখলাম সারারাতই সরগরম।
ততক্ষণে সবাই ঘুম, আমি একা জেগে। সে রাতে পূর্ণিমা ছিলো কিনা জানি না, তবে গভীর রাতে হালকা কুয়াশায় ধানখেত আর ছোট গ্রামগুলোর মাঝ দিয়ে যখন ট্রেন যাচ্ছিলো, তখন লক্ষ্য করলাম, আকাশের চাঁদের সঙ্গে ওদের যেন বন্ধুত্ব। জানালা ভেদ করে চাঁদের আলো এসে পড়ছিলো ভেতরে। এতো মিষ্টি আলো, ইচ্ছে করছিলো ছুঁয়ে দেখি। কখন যেন নিজেই গুনগুন করতে শুরু করেছি,
‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা
ভাঙা বেড়ার ফাঁকে
অবাক জোছনা ঢুইকা পড়ে
হাত বাড়াইয়া ডাকে…’
সকালে চট্টগ্রাম নেমে আমরা গেলাম বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের রেস্ট হাউসে। পাহাড়ের ওপরে সাজানো সবুজ বাগানের মধ্যে রেস্ট হাউসটি দেখেই আমাদের সারারাত জার্নির ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম যে যার মতো।
বিকেলে সবাই মিলে ফয়'স লেকে বোটে করে লেকের পানিতে ঘুরলাম। ওখানকার মার্কেটিং ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ঘোষের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তায় দারুণ কাটলো সন্ধ্যাটা।
এরপর শহরের কাজীর দেউড়িতে বাংলানিউজের চট্টগ্রাম অফিসে কিছুক্ষণ থেকে ফিরে এলাম রেস্ট হাউসে। আবার রাতের খাবার, গল্প আড্ডায় অনেক রাত…
শনিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকেই ব্যস্ততা শুরু। সকাল ৯টায় পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু-তে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন স্যারের সঙ্গে মিটিং। ডেপুটি অ্যাডমিন ম্যনেজার শিমু, আজাদ, কান্ট্রি এডিটর শিমুল আর আমি। ওখানে আগে থেকেই ছিলেন এডিটর স্যার, এরপর এলেন হেড অব মার্কেটিং সিরাজুল ইসলাম, ওয়েব ইন চার্য অমিয় দত্ত ভৌমিক, বিনোদন চিফ জনি হক ও চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ তপন চক্রবর্তী।
সন্ধ্যায় বিশাল আয়োজন নিয়ে নানা আলোচনা শেষে আমরা অনুষ্ঠানের ভেন্যু রেডিসন ব্লু-র মেজবান হল ঘুরে দেখলাম।
একটু সময় পেয়ে আজাদ আর ফটোগ্রাফার নূরকে নিয়ে চট্টগ্রামের দেশি দশ, আড়ং, জেন্টলপার্কসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস ঘুরলাম। বুঝলাম, এখানকার তরুণ-তরুণীরাও যথেষ্ট ফ্যাশন সচেতন।
দুপুরের খাবারের আয়োজন ছিলো রেস্টুরেন্ট ‘রোদেলা বিকেল’-এ। খাওয়া শেষে রুমে ফিরে রেডি হয়ে সবাই সন্ধ্যার আগেই রেডিসন ব্লু-তে।
শুরু হলো মিলন-মেলা, এক ঝলমলে সন্ধ্যা। মন্ত্রী, মেয়র, সাবেক মেয়র, প্রশাসক, বিচারক, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিল্পীসহ সবাই এক হয়েছিলেন বাংলানিউজের পাঁচ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানাতে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেই সঙ্গে চলে খাওয়া-দাওয়া। এতো আনন্দের মাঝেও বাংলানিউজের কর্মীবাহিনী হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন ও আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মণ্ডলের নেতৃত্বে তৎপর ছিলো প্রতিমুহূর্তের সংবাদ আর ব্রেকিং দিতে।
অতিথিদের বক্তব্য শেষ হতেই প্রজেক্টরের বিশাল পর্দায় ছবিসহ নিউজ দেখে বাংলানিউজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সবাই।
পরদিন সকালে সূবর্ণতে ফেরার পালা। খুব ভোরে উঠে স্টেশনের পথ ধরলাম আমরা। তিনদিনের এই ভ্রমণে সঙ্গে নিয়ে এলাম বাংলানিউজের জন্য অনেক ভালোবাসা-শুভকামনা, আর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের যোগ্য নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
এই সফল আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ তপন চক্রবর্তী ও তার টিমকে।