ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ডা. মহিউদ্দিন মাসুম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১১
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ঢাকা: এখন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। বৃষ্টির মৌসুম এটা।

ফলে ডেঙ্গু জ্বরের জীবানুবাহী এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বাড়ছে। বিশেষ করে বৃষ্টিপাতের সময় মশার ডিম পাড়া ও প্রজননের জন্য খুবই উপযুক্ত।

বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে এ জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বছরের এ সময়ে ডেঙ্গুজ্বর দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গুর মৌসুম শীতের আগ পর্যন্ত থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এডিস মশা কখন কামড়ায়
ডেঙ্গু জ্বর হয় এডিস মশার কারণে। আর এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। ভোরে সূর্যোদয়ের আধঘণ্টার মধ্যে ও সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য সব জ্বর, যেমন টাইফয়েড, সাধারণ জ্বর প্রভৃতির সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের মূল পার্থক্য হলো প্রথম দিন থেকেই প্রচন্ড জ্বর অনুভূত হবে (১০২-১০৩ ডিগ্রি); সঙ্গে তীব্র গা ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, দেহের পেছনের অংশে ব্যথা প্রভৃতি থাকবে। বমি হওয়া, খেতে না পারা এমনকি ক্লান্তি ভাবও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরেও র‌্যাশ উঠবে, দাঁত মাজার সময় রক্তও পড়তে পারে, কালো পায়খানা হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ
ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কারণ এডিস মশা-এটা সবাই জানে। তাই মশাকে নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ তথা তার প্রকোপ কমানোর প্রধান উপায়। মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা ডিম পাড়ার স্থান যা-ই বলি না কেন, এগুলোকে ধ্বংস করতেই হবে। বড় বড় ভবনের আশপাশে, কোণায় কোণায়, ডাস্টবিন ও এর আশপাশের স্থান; এমনকি ঘরের পাতিল, বদনা এসব স্থানেও যেন চার-পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

১. এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন।
২. বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালতের আনাচ-কানাচে মশার স্প্রে বা ওষুধ ছিটাতে হবে যাতে এসব স্থানে কোনোভাবেই মশা আশ্রয় নিতে না পারে।
৩. ঘরের দরজা, জানালায় ও ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করুন।
৪. বাচ্চাদের স্কুলের ড্রেসে ফুলহাতা শার্ট, ফুলপ্যান্ট ও মোজা পরালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।
৫. ঘর-বাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা ও এ-জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে এমন পাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে, যেন পানি জমতে না পারে।
৬. গোসলখানায় বালতি, ড্রাম, প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাংক কিংবা মাটির গর্তে পাঁচদিনের বেশি কোনো অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। পরিস্কার ও স্থবির পানিতে ডেঙ্গুর জীবানু বেশি জম্মায়।
৭. অব্যবহৃত গাড়ির টায়ারে যাতে পানি জমতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
৮. ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টবে ও মাটির পাত্রে সামান্য পানি জমে থাকলে তা-ও নিষ্কাশন করুন।

চিকিৎসা
সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতোই এর চিকিৎসা। এজন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা নেই। এমনকি চিকিৎসা না করলেও এমনিতেই ডেঙ্গু জ্বর ভাল হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এরোগে মৃত্যু ঝুঁকি নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ সতর্কতা
ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত রোগীদের সাধারণ জ্বরের মতো অ্যাসপিরিন অথবা অন্য কোনো জ্বরের বা ব্যথার ওষুধ দেওয়া যাবে না। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকও নয়, কারণ এ সময় অ্যান্টিবায়োটিক কোনো সাহায্য করে না। শুধুমাত্র প্যারাসিটামল রোগীর জ্বর কমাতে সাহায্য করে। এসময় রোগীকে প্রচুর তরল খাবার দিতে হবে। দৈনন্দিন খাবারের সাথে পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস ইত্যাদি রোগীর জন্য সহায়ক। মায়ের দুধ পানকারী শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো যাবে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হলে অন্যান্য রোগীর মতোই যতœ নিতে হবে।

রোগী কেন মারা যায়
অত্যধিক তাপমাত্রার জ্বরের জন্য দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয় দ্রুত। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশপাশের রক্তনালিতে চাপ পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ। ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশি মাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যায় কমে যায়। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় শক সিনড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার অভাবে রুগী দ্রুত অবনতি ঘটে। নেমে আসে অবাঞ্ছিত মৃত্যুর অন্ধকার।

রক্তের কোন পরীক্ষা জরুরি
রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। তবে এটি কোনো নিশ্চিত পরীক্ষা নয়। সাধারণ জ্বর হলেই এটি করার দরকার নেই, কারণ এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা। সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) হয়, তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি রুটিন পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরি। যদি প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয়, তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময় ২০১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।