প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা মোকাবিলা ও প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসহ জনগণকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ বারবার দিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকার। ঘন ঘন জীবাণুনাশক বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি অতি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে ও বাইরে থেকে ফিরে হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাতকে জীবাণুমক্ত করার ওপরই জোর দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জীবাণুনাশক ও জীবাণুমক্তকরণ এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন। নামকরা কোম্পানির হ্য্যান্ডরাব ও হ্যান্ডসানিটাইজারের চাহিদা বেশি বলে বাজারে ব্র্যান্ড পণ্যের দামও কয়েকগুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে। আবার এগুলোর মতোই দেখতে নকল পণ্যও বাজারে ছেড়েছে অসৎ ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া গাইডলাইন বা বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা মেনে তৈরি হচ্ছে না মানসম্পন্ন হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার। ফলে করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের কয়েক কোটি মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে শতকরা ৭৫ ভাগ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল (আইপিএ) অথবা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল থাকতে হবে। কিন্তু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের বাজারে চলমান কোনো হ্যান্ডরাব বা হ্যান্ডস্যানিটাইজারে ৭৫ ভাগ আইপিএ বা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল উপাদান বিদ্যমান নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইপিএ বা ইথানলের বদলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবেই যেনতেন করে তৈরি হচ্ছে এসব সুরক্ষা পণ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এর সিডিসি ফরম্যুলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্যানিটাইজার তৈরি করছে। এই সিডিসি ফরম্যুলাতে বলা হয়েছে জীবাণুনাশক হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার পণ্যে শতকরা ৬০ ভা থেকে ৭০ ভাগ আইপিএ থাকলেও জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে কার্যকর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ফরম্যুলাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমর্থন ও গ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন , করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে বাজারে অসংখ্য নামে হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে। এগুলো একই পরিমাণে কোনোটির দাম ৫০ টাকা আবার কোনোটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। অধিকাংশ বোতলের গায়ে পণ্যের উপাদানের বিবরণ নেই। তৈরির দিন তারিখ বা ব্যাচ নম্বরও নেই। এসব সুরক্ষা পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত মানুষ ঠকছে ও করোনার ঝুঁকিতেই পড়ছে। অনেকেই সুরক্ষা না পেয়ে আক্রান্তও হচ্ছেন।
নকল, নিম্নমানের এসব হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করে করোনার পাশাপাশি ত্বকে অ্যালার্জিও হতে পারে। এতে করে মারাত্মক ঝুঁকিতেই থাকছে অসংখ্য মানুষ।
জনস্বাস্থ্য গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ইসলামি ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. চিন্ময় দাস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেই হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার প্রস্তুত ও বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। শুধুমাত্র নিবন্ধিত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যাতে সঠিক গাইড লাইন অনুসরণ করে এসব পণ্য তৈরি করে তাও কঠোরভাবে নিশ্চিত করা দরকার। যেনতেন করে এসব সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি ও বিক্রির অভিযোগ আগেই উঠেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নকল হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার উদ্ধারও হয়েছে।
কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় এখনই সবার সচেতন হতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে থাকতে হবে আরও সতর্ক।
হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার কেনার সময় অবশ্যই প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনের তারিখ, কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে এবং কোন কোন উপাদানে তৈরি এসব নিশ্চিত হয়ে নিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
এসআইএস