তারকা হোটেল থেকে শুরু করে দেশীয় সাধারণ মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন মানের ফাস্টফুডের দোকানে দেখা যায় খাবার নষ্ট করার মচ্ছব। আর বাড়ি বা আত্মীয় বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতেও প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ প্লেট ভরে খাবার নেয়, এর কিছুটা খায় বাকিটা নষ্ট করে রেখে দেয়।
খাবার নষ্ট করা অনেকটাই পরিচিত দৃশ্য আমাদের চারপাশের। এটা দেখতে দেখতে আমরা অনেক সময় এভাবে বাড়তি খাবার নষ্ট করাকে মেনেই নেই বা স্বাভাবিকই মনে করি।
কিন্তু একবারও কি তাদের কথা ভাবা হয়, খাবারের অভাবে যে শিশুটি রাতে না খেয়ে ঘুমাচ্ছে? তার অসহায় বাবা-মা নীরবে চোখের পানি মুছছেন। পৃথিবীর কত মানুষ পেটপুরে দু’বেলা খেতে পায় না, সে হিসাব কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে, আর তাই খাবার নষ্ট করার আগে একবার ছোট একটি ক্ষুধার্থ শিশুর মুখ ভাবি, যে হয়ত আমাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে, একটু খাবারের জন্য।
এরপর রয়েছে খাবার তৈরির কষ্ট, ধরুন আমরা অতিথি আসবে বলে সারাদিন চুলার গরম সহ্য করে রান্না করলাম, অতিথি খেতে বসে অর্ধেক খাবার নষ্ট করলেন। অথচ পরিবারের অনেকের তখনও খাওয়া হয়নি, আপনি বুঝতে পারছেন, খাবারে কম পড়তে পারে। তখন কেমন লাগবে বলুন তো...
আরও আছে, মাসের বেতনের অনেকটা অংশই খরচ করলেন কোনো বিশেষ দিনের অতিথি আপ্যায়নে, তারা এসে এভাবে অতিরিক্ত খাবার নিয়ে না খেতে পেরে নষ্ট করে গেলেন, এবার আপনার মনের অবস্থা কী হবে ভাবুন...
খাদ্য উৎপাদনের কথা ভাবনায় এসেছে কখনো? একবার প্রক্রিয়াগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে কৃষকের পরিশ্রম, বিনিয়োগ, ভূমি, পানি ও শক্তিসম্পদ আরও কত কিছু!
এত কষ্টের পরে যে পরিমাণ খাবার প্লেটে আসে, আমাদের উচিত কোনোভাবে খাবার নষ্ট না করে প্রয়োজনীয় খাবারটুকু খাওয়া।
খাবার বেঁচে গেলে ফেলে না দিয়ে পাশের ক্ষুধার্থ মানুষদের পৌঁছে দিন। দেওয়ার সময় যেন আমাদের আচরণে যথেষ্ট নমনীয়তা থাকে। যেন যাকে দিচ্ছি, তার নিতে সংকোচবোধ না হয়।
খাবার অপচয় না করার শিক্ষা আমাদের পরিবার থেকেই শিশুদের দিতে হবে। এজন্য নিজেকেই সচেতন হতে হবে সবার আগে, কারণ আপনাকে যা করতে দেখবে, শিশু সেটাই শিখবে।
যাদের সামর্থ্য থাকে অন্য অনেক কিছুর আগে মানুষের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা নিন। পৃথিবীর কোনো মানুষ যেন ক্ষুধার কষ্ট না করে...এটাই প্রত্যাশা।
ছবি: রওশন আলী রিপন
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
এসআইএস