নিজস্ব সৃষ্টির আনন্দ সবসময়ই অতুলনীয়। এই আনন্দ উপভোগ করা, নিজের স্বাধীনতা, নিজের রাজত্বের পাশাপাশি অন্যের জন্য কিছু করার সম্ভাবনা সবসময়ই উদ্যোক্তার থাকে।
উদ্যোক্তাই পারে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন একটি উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে। সঠিক দিক নির্দেশনা ও সঠিক পথে চললে উদ্যোক্তার জন্য সফলতার পথ উন্মুক্ত হয়। উদ্যোক্তার সফলতার পথ কঠিন হলেও অসম্ভব না। একজন উদ্যোক্তার সফলতার পথে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন জয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে, দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করছেন।
- উদ্যোক্তাকে হতে হবে যথেষ্ট পরিশ্রমী এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সফলতার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প কিছু নেই। নতুন উদ্যোগ শুরু করার আগে থেকেই নিজেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। উদ্যোক্তার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তার জন্য প্রতিটি মুহূর্তই পরিশ্রমের, প্রতিটি মুহূর্তই লড়াইয়ের। নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিশ্রম করে যেতে হবে লক্ষ্যে পৌঁছানো পর্যন্ত, কখনো কখনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরও পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে।
- উদ্যোক্তার ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। নতুন কোনো কিছু সৃষ্টি করে, নতুন একটা ব্যবসা করতে কিছুটা ঝুঁকি নিতেই হয়। শুরুতেই হয়ত সফলতা আসবে না, হয়ত লাভের তুলনায় লস বেশি হবে এসব ঝুঁকি মেনে নিয়েই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়াতে হবে।
- নিজের উদ্যোগের পেছনে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছক আঁকতে হবে। গোছানো পরিকল্পনার করে ধাপে ধাপে সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করতে হবে। আবার অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করাও ঠিক না।
- একজন উদ্যোক্তার একটি স্পষ্ট ভিশন থাকতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সে নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে ঠিক কোন অবস্থানে দেখতে চায় সে ভিশনটি তার কাছে হবে পানির মতো স্বচ্ছ। সে কি করছে, তার উদ্দেশ্য, কোন পথে সে এগোবে, তার পরিকল্পনাসমূহ এবং তার লক্ষ্য সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
- নিত্য-নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা ও মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হওয়ার পুরো পথটাই চ্যালেঞ্জিং। তাই যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে।
- কখনোই উদ্যোক্তা তার উদ্যোগকে শখ কিংবা বোঝা মনে করবে না। নিজের উদ্যোগকে নিজের প্যাশন মনে করতে হবে। নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন নিজের প্যাশনের জায়গা থেকে সরে আসা চলবে না।
- উদ্যোক্তার জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা খুব জরুরি। নিজের যোগ্যতার প্রতি, নিজের গুণের প্রতি এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস বা সংশয় একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় পিছুটান। সব সময় আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। ‘আমি কি পারবো?’-এই প্রশ্নকে মনে কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। সব সময় মানতে হবে, ‘আমি পারবো। ’
- পরিকল্পনা ছাড়া নতুন উদ্যোগ শুরু করা বোকামি। উদ্যোক্তাকে অবশ্যই তার উদ্যোগ শুরুর আগে তার উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে শুরু করা উদ্যোগগুলোর বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়।
- উদ্যোক্তার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে চেনা, নিজের জানা। নিজের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী শক্তিশালী দিকগুলোকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে দুর্বল দিকগুলোকে বর্জন করা। কখনোই নিজের দুর্বল দিকগুলোকে নিজের শক্তিশালী দিকগুলোর ওপর প্রভাব ফেলার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
- একজন উদ্যোক্তার নিয়মিত নিজের উদ্যোগ সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করার চর্চা থাকতে হবে। যেমন - নিজের পণ্যের ব্যাপারে গবেষণা, পণ্যের মূল্য, মার্কেট, প্যাকেজিং, টার্গেট কাস্টমার সম্পর্কে গবেষণা, কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কে গবেষণা, কাস্টমারের অভিযোগ সংক্রান্ত গবেষণা, কাস্টমারের আচরণগত গবেষণা, রিভিউ সংক্রান্ত গবেষণা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে নিজের উদ্যোগকে আরো সফল, আরো উন্নত করার জন্য কাজে লাগাতে হবে।
- নিজের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে একজন উদ্যোক্তার সব সময় অধ্যয়নের মধ্যে থাকতে হবে। নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে জানতে হবে। একজন উদ্যোক্তা যত জানবে ততই সে অন্যকে জানাতে পারবে এবং তার পণ্যের প্রতি অন্যকে আগ্রহী করে তুলতে পারবে।
- উদ্যোক্তাকে সব সময় মনে করতে হবে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সে নিজেই। নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে নিজের কাজের উন্নতি করতে হবে।
- টার্গেট কাস্টমারকে চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সময় নিয়ে কাস্টমারদের ব্যাপারে গবেষণা করতে হবে। টার্গেট কাস্টমার শনাক্ত করতে না পারলে উদ্যোক্তার বাকি সব দিক ঠিক থাকলেও তার উদ্যোগ থেকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে না। তাই নিজের উদ্যোগের ক্ষেত্রে সঠিক টার্গেট কাস্টমার শনাক্ত করা জরুরি।
- একজন উদ্যোক্তাকে ভালো বক্তা হওয়ার পূর্বে ভালো শ্রোতা হতে হবে। তার কাস্টমার কিংবা টিম মেম্বারদের অভিযোগ, উপদেশ, পরিকল্পনা, প্রত্যাশা ইত্যাদি গুরুত্ব সহকারে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একজন ভালো শ্রোতা হয়ে সব ধরনের অভিযোগ কিংবা মতামত শোনার পরেই একজন ভালো বক্তা হিসেবে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
- মাথায় রাখতে হবে,"প্রচারেই প্রসার। " তাই সঠিক পদ্ধতিতে নিজের উদ্যোগের সবধরনের প্রচারণা চালাতে হবে, নেটওয়ার্কিং এ মনোযোগী হতে হবে।
- নিজ উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক কোনো ব্যর্থতা দেখে হতাশ হওয়া চলবে না। ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে, ব্যর্থতাকে সফলতার সিঁড়ি হিসেবে ধরে নিয়ে নতুনভাবে শুরু করতে হবে। সাময়িক ব্যর্থতাকে ভয় পেয়ে পিছপা না হয়ে, দীর্ঘমেয়াদী সফলতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
লেখা: জয়া
স্বত্তাভিকারী : পরিধান শৈলী - Poridhan Shoili
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২০
এসআইএস