পিরিয়ড বা মাসিক নারী জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা একটি জীবন ঘনিষ্ট প্রাকৃতিক ঘটনা ও স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া।
মেয়ে বা নারীর সঙ্গেই এই মাসিক প্রক্রিয়ার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
সাধারণত ৯ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়। তবে মেয়েদের বা নারীদের নিজস্ব শারীরিক গঠন ও হরমোনের প্রভাবে এই মাসিক শুরু হওয়ার সময়টি তারতম্য হয়ে থাকে। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজের সুবাদে জানার সুযোগ হয়েছে যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ কিশোরীই তাদের জীবনের প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পূর্বে সাধারণত এ নিয়ে কোনো প্রকার স্পষ্ট ধারণা লাভের সুযোগ পায় না, ফলে তারা জীবনের শুরুতেই মাসিক নিয়ে একটি বিব্রতকর ঘটনার মধ্য এই বিষয়টির পরিচিতি ঘটে।
পাশাপাশি স্বাভাবিক এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে নেতিবাচক অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হতে হয় অনেকের। কখনো কখনো শুরুর সময়ে এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতাটি তাকে মাসিকের মতো একটা স্বাভাবিক বিষয় সম্পর্কে একটা মানসিক অসুস্থতা তৈরি করে।
পাহাড় কিংবা সমতল, নারীর জীবনের মাসিক প্রক্রিয়ার ঘটনা বা তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো প্রায় একই রকম। তবে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দুর্গমতার ভিন্নতা অনুযায়ী প্রেক্ষাপটগুলো আরো বেশি করুণ হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্যকর উপকরণ ব্যবহার ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার রীতিতে অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে।
একজন মেয়ের মাসিক শুরুর গড় বয়স হচ্ছে ১২ এবং মাসিক প্রক্রিয়া শেষ বা মেনোপজ শুরু হওয়ার গড় বয়স হলো ৫১ বছর। আর প্রতি মাসে একজন কিশোরী বা নারীর মাসিক চলাকালীন সময় প্রায় ২-৭ দিন। এটা নির্ভর করে নারীর জীবনাযাপন, দৈহিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস, এবং হরমোনের প্রভাবের ওপর।
নীরবতা ভেঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং মাসিকের সঙ্গে সম্পর্কিত চারপাশের বিদ্যমান এই নেতিবাচক সামাজিক নিয়মগুলো পরিবর্তন করতে বিশ্বজুড়ে ২৮ মে বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০১৩ সালে জার্মানভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াশ ইউনাইটেড’ কর্তৃক এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে প্রথম উদযাপনের পর থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালনের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২১ সালে এ দিবসটি পালনে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- মাসিক স্বাস্থ্য ও পরিচর্যার জন্যে প্রয়োজন আরো কার্যকর উদ্যোগ ও বিনিয়োগ।
মাসিক সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে নারী ও কিশোরীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার বা সামাজিক প্রথা আছে, যা একজন নারীকে একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার ভোগ করা থেকে তাকে বঞ্চিত করে।
এর ফলে সে শুধু শারীরিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, মানসিকভাবেও থাকে হীনমন্যতায়। আমরা দেখতে পাই, প্রতি মাসেই চলমান একটা জৈবিক প্রক্রিয়ার মতো একটা স্বাভাবিক ঘটনা নিয়েও আমরা পরিবার বা সমাজে কোনো আলোচনা করি না।
অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় পর্যায়ে আরো এ সময় নারীদের সহযোগিতা করা উচিত, যেন তারা সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করার ব্যাপারে সংকোচবোধের বদলে উৎসাহিত হয়।
লেখা: সুমিত বণিক, জনস্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশিক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২১
এসআইএস