ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড উৎসবে বাংলাদেশি রসনাশিল্পের জয়জয়কার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড উৎসবে বাংলাদেশি রসনাশিল্পের জয়জয়কার

বিশ্বের কারি শিল্পের অস্কার হিসেবে খ্যাত ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের ১৭তম উৎসব লন্ডনের ব্যাটারসি এভল্যুশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে গত সোমবার (২৭ নভেম্বর)।

কারি বিশ্বে অনন্য মর্যাদাসম্পন্ন এ পুরস্কার প্রবর্তনের আদি প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এনাম আলি এমবিইর উদ্যোগে জাস্ট ইট এর সহযোগিতায় তারকাখচিত এবারের আয়োজন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

তিনি বলেন, দশকের পর দশক নিজেদের তৈরি সুস্বাদু খাবারের জাদুতে আমাদের যারা বিস্মিত ও মোহিত করে চলেছেন, কারি শিল্পের সেইসব প্রতিভাধর শিল্পীর জাতীয় স্বীকৃতি প্রদানের এ উৎসব সত্যিই এক অভাবনীয় আনন্দের অভিজ্ঞতা। আরও আনন্দের ঘটনা এটাই যে, গত দুই বছর জাতির কঠিনতম দিনগুলোয় দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের নিঃস্বার্থ ও নিরলস সেবা ও সাহস যুগিয়েছে, ঘরবন্দি মানুষের জন্য ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়ে লাখ লাখ জীবন বাঁচিয়েছে এ শিল্প।

মূলত ব্রিটিশ কারি শিল্পের সিংহভাগের নিয়ন্তা ব্রিটিশ-বাংলাদেশি উদ্যাক্তাদের হাতে শুরু হয়ে আজ ব্রিটেনের অন্যতম জাতীয় উৎসব হয়ে ওঠা এ আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি যে, দেশের ৫০টির বেশি বড় শহর থেকে ১০ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট নিয়ে গড়া এই শিল্প আবার জমজমাট ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কারি অ্যাওয়ার্ডের ১৭তম এই আয়োজনে আমি কারি শিল্পের সাথে জড়িত সব রেস্টুরেন্ট, শেফ এবং ওয়েটারকে জানাই আমার অভিনন্দন।

ব্রিটেনের কারিভুবনে বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ উৎসবে যোগ দিতে ‘কারি অস্কার’ শিরোপা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে এবারও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারা দেশের সেরা রেস্টুরেন্ট প্রতিনিধিরা এসে হাজির হন রাজধানী লন্ডনে। কোভিড মহামারির রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির অবসানে আনন্দঘন জাঁকজমকপূর্ণ এ উৎসবের ঔজ্জ্বল্য আরও বাড়িয়ে দিতে ক্রীড়া, বিনোদন, সংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশ্বসেরা একঝাঁক তারকার উপস্থিতি।

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন সেলিব্রিটি ক্রিকেটার আাজিম রফিক, লাভ আইল্যান্ড প্রতিযোগী খ্যাত প্রিয়া গোপালদাস ও জনপ্রিয় মডেল ড্যানিয়েল ম্যাসন, সাবেক ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ বিজয়ী সিয়ান গ্যাবিডন, টিভি প্রেজেন্টার মেলিন্ডা মেসেঞ্জার, লিজি কান্ডি, ফেই বারকার, হেইলি স্পার্কস এবং হেলি পামার, রেডিও উপস্থাপক জেমস হোয়েল, টেলিভিশন জিপি ড. আমির খান, নির্মাতা ও অভিনেতা মিসতাহ আইলাহ, সঙ্গীতশিল্পী পাত্তি বুলায়ে ও মিস্টার ফ্যাবুলাস, রেস্তোরাঁ সমিতির প্রেসিডেন্ট রবার্ট ওয়ালটন এমবিই, জনপ্রতিনিধি ক্রিস গ্রেলিং ও ফয়সল চৌধুরী, রুপলস ড্র্যাগ রেস ইউকে-এর বাগা চিপজ এবং রিয়েলিটি টিভি উপস্থাপক রবি ম্যাকমোহন।

১৭তম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের গোটা আয়োজনটি উপস্থাপন করেন জননন্দিত অভিনেতা ও কমেডিয়ান ওমিড ডিজালিল। এছাড়া ওয়েস্ট মিডল্যান্ড ক্যাটাগরিতে সেরা রেস্টুরেন্টের পুরস্কার তুলে দিতে ভার্চুয়ালি পুরস্কার আয়োজনের সঙ্গে ভারতের মুম্বাই থেকে বিশেষভাবে যুক্ত হন বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চন।

বিগত দেড় বছরের কঠিন কোভিডকালে অকালে হারিয়ে গেছেন ব্রিটিশ কারি শিল্পের যেসব অগ্রণী পথিকৃৎ, ব্যবসায়ী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, সেই মানুষগুলির প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এবারের গোটা উৎসবটি তাদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করেন এর আয়োজকরা।

ব্রিটেনজুড়ে বিস্তৃত এশীয় তথা ইন্ডিয়ান কারি শিল্প হিসেবে পরিচিত রেস্টুরেন্ট শিল্পের ৯০ শতাংশের বেশিই বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের হাতে গড়া। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট উদ্যোক্তারাই অধিকাংশ পুরস্কার জিতে এলেও এ বছরই কিছুটা পিছিয়ে পড়েন তারা। মোট ১২ ক্যাটাগরিতে এ বছর তাদের দখলে আসে ৪ শিরোপা; ২টি পান পাকিস্তানি উদ্যোক্তারা এবং বাকিগুলি নিয়ে যান ভারতীয়রা।

ব্রিটিশ কারি শিল্পে শেফ-ঘাটতি মেটাতে প্রবর্তিত ভিন্দালু ভিসার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রাণবন্ত এ উৎসবের উদ্যোক্তা এবং দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী এর প্রসারে নিরত ব্রিটিশ কারি শিল্পের শীর্ষ মুখপাত্র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এনাম আলি এমবিই আয়োজনের সাফল্য নিয়ে বলেন, সবচেয়ে আনন্দের কথা, লকডাউনের ভগ্নদশা পেরিয়ে আবারো নতুন উদ্যমে প্রাণের সাড়া জেগে উঠেছে রেস্টুরেন্ট আর রসনাবিলাসী মানুষগুলোর মধ্যে। এই উত্তরণে গ্রাহকদের অভাবনীয় সমর্থন আমরা পেয়েছি, তবে প্রস্তুতি রযেছে সামনে আরো দুস্তর পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য।

উৎসবের সহযোগী জাস্ট ইট-এর ইউকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যানড্রু কেনি বলেন, এমন একটি সম্মানজনক আয়োজনে স্পন্সর হতে পেরে আমরা ধন্য। চ্যালেঞ্জিং ১৮টি মাস পেরিয়েছি। চ্যালেঞ্জ উৎরে আমরা টিকে থাকতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, এই কঠিন অর্থনীতির মধ্যেও আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে, ও থাকবে।

১৭তম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যারা এ বছর সেরার স্বীকৃতি পেলেন তারা হলেন, বেস্ট রেস্টুরেন্ট স্কটল্যান্ড ক্যাটাগরিতে ডিশুম; বেস্ট রেস্টুরেন্ট নর্থ-ইস্টে মুমতাজ রেস্টুরেন্ট, এবং নর্থ-ওয়েস্ট আশা’জ; ইস্ট মিডল্যান্ডে মনতাজ নিউমার্কেট, ওয়েস্টে মিডল্যান্ডে পুশকার রেস্টুরেন্ট, ওয়েলশে পারপল পপাডম, সাউথ ইস্টে শেফ মুমতাজ, সাউথ ওয়েস্টে পৃথিবী রেস্টুরেন্ট, লন্ডন সেন্ট্রাল অ্যান্ড সিটিতে বানারস, আউটার অ্যান্ড সাবার্বে শাম্পান ব্রমলি, বেস্ট নিউকামার ক্যাটাগরিতে মথুরা রেস্টুরেন্ট, বেস্ট টেকঅ্যাওয়ে ক্যাটাগরিতে মালিকস এক্সপ্রেস কিচেন এবং মোস্ট ইনোভেটিভ রেস্টুরেন্ট কনসেপ্ট ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নেয় খাই খাই ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।