ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নৃত্যের মাধুর্যে মুগ্ধতা ছড়ালো ‘ওয়ানগালা’ উৎসব

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
নৃত্যের মাধুর্যে মুগ্ধতা ছড়ালো ‘ওয়ানগালা’ উৎসব ওয়ানগালা উৎসবে পরিবেশিত নৃত্যগীতি।

মৌলভীবাজার: নানা রকমের বাহারি পোশাকে হাজির আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের নারীরা। চলল তাদের বর্ণিল এক অনুষ্ঠান।

বাহারি রংবেরঙের পোশাক। লাল, হলুদ, সাদা রঙের সৌন্দর্য শোভা ছড়ালো নৃ-জনগোষ্ঠী নারীদের সর্বাঙ্গে। ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীতে অংশ নিলেন তারা। নৃত্যের মাধুর্যে তাদের সেই কৃষ্টি-সংস্কৃতি মুগ্ধতা ছড়ালো।

গারো জনগোষ্ঠী ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন আদিবাসী জাতিসত্ত্বার লোকজন উপভোগ করল সেই নৃত্য।  

এদিকে এক জায়গায় গোল করে ঝুড়ির মধ্যে রাখা হয়েছে জমি থেকে তুলে আনা নতুন ফসল। সৃষ্টিকর্তার নামে এই নতুন ফসলগুলো উৎসর্গ করা হলো। এরই সঙ্গে চলল গারো সংস্কৃতির নাচগান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  

বর্ণিল এসব আয়োজনে অনুষ্ঠানের নাম ‘ওয়ানগালা’। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে হয়ে গেল এই উৎসব। ‘ওয়ানগালা’গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বড় উৎসব।  

রোববার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা থেকে গারো জনগোষ্ঠীর লোকজন ফুলছড়া গারো লাইন এলাকায় জড়ো হন। গারো জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন।  

প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী খাওয়াদাওয়ার মধ্য দিয়ে গারো জনগোষ্ঠী উদ্‌যাপন করে নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব ‘ওয়ানগালা’। উৎসবে নতুন ফসল ঘরে তোলার বিভিন্ন অনুষঙ্গ নৃত্যগীতের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়।

সেদিন দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ানগালা উপলক্ষে আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল ক্যাথলিক মিশনের পালপুরোহিত ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ।

গারো সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘ওয়ানগালা’ গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ‘ওয়ান’ শব্দের অর্থ দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে দান করা দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেব-দেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে।  

সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন।

গারোরা নিজেদের ‘আচিক মান্দি’ বা ‘পাহাড়ি মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দিতে অধিক পছন্দ করেন। তবে সমতলের গারোরা নিজেদের শুধুই ‘মান্দি’ বা ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দেয়। গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন।  

নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে, তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে শস্যদেবতার প্রতি। গারো সম্প্রদায়ের এটাই নিয়ম। তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদ্‌যাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে।

ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য সামুয়েল হাজং বলেন, দেবতার সন্তুষ্টির পাশাপাশি এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য আমাদের ভাষা-সংস্কৃতিকে জাগ্রত রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে এ সম্পর্কে জানানো।

গারোদের ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা

অনুষ্ঠানে আসা শ্রীমঙ্গল নটর ডেম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ফাদার মৃণাল ম্রং বলেন, ওয়ানগালা গারোদের অনেক প্রাচীন একটি উৎসব। এ অনুষ্ঠান মূলত অগ্রহায়ণ মাসেই হয়। তখন নতুন ফসল ঘরে ওঠে। গারোরা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার আগে ‘মিসি সালজং’কে সন্তুষ্ট করতে তাকে ডাকত। গারোরা নতুন ফসল ধান, ফল, সবজি ইত্যাদি ঘরে তুলে নিজেরা খাওয়ার আগে মিসি সালজংকে উৎসর্গ করত। এখন গারোরা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার পর নতুন ফসল যিশুখ্রিষ্টের নামে উৎসর্গ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২
বিবিবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।