ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্ত্রীর পরকীয়া

জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনায় প্রাণ যায় চানাচুর বিক্রেতা মনসুরের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনায় প্রাণ যায় চানাচুর বিক্রেতা মনসুরের

ঢাকা: নওগাঁর মান্দা উপজেলায় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় দুই প্রেমিকের পরিকল্পনায় চানাচুর বিক্রেতা মনসুর রহমানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী ও নিহতের স্ত্রীর প্রেমিক দুই জাহাঙ্গীরের একজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে সাভার থানার হেমায়েতপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, নিহত মনসুর রহমানের প্রথম স্ত্রী হাসিনা একাধিক পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত। এমন কী জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে যায়। তার এ পরকীয়ায় বাধা দিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মনসুরকে হত্যা করা হয়।  

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, নওগাঁর মান্দা এলাকার বাসিন্দা নিহত মনসুর ও গ্রেফতার জাহাঙ্গীর পাশের গ্রামের বাসিন্দা। নিহত মনসুর বিভিন্ন দোকানে চানাচুর বিক্রি করতেন।  তিনি দুই বিয়ে করে স্ত্রীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। প্রথম স্ত্রী হাসিনা ও দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা। হাসিনা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে পরকিয়া প্রেমে আসক্ত। প্রথমে হাসিনা সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের (২৯) সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়ান। পরে মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় মনসুরের নিজ বাড়িতে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরসহ তার আরও কয়েকজন বন্ধু হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় পাশের ঘরে হাসিনা ও জাহাঙ্গীরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান মনসুর। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় মনসুরের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। এমন সময় জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা মনসুর ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার কথা বলে মনসুরকে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে যান। এ ঘটনার সময় মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা জাহাঙ্গীর ও মনসুরকে বাড়ি থেকে বাগানের দিকে চলে যেতে দেখেন।  

র‍্যাব-৩ অধিনায়ক জানান, হাসিনা ও জাহাঙ্গীরের আপত্তিকর অবস্থাটি দেখে ফেলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এ ঘটনার পেছনের মূল মাস্টারমাইন্ড ছিল নিহতের স্ত্রীর প্রেমিক ও একই এলাকার মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর। এক জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন শাহেব আলীর ছেলে ও হাসিনার আরেক প্রেমিক জাহাঙ্গীর। হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দু-তিনদিন আগে থেকে মনসুরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন।

মনসুরকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড ও মূল পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আগে থেকেই বাগানে অপেক্ষায় ছিলেন উল্লেখ করে আরিফ মহিউদ্দিন জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী মনসুরকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার পর মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সবাই মিলে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। আহত মনসুরের হত্যা নিশ্চিত করতে গ্রেফতার জাহাঙ্গীর তার মাফলার দিয়ে মনসুরের গলায় পেঁচিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন।  

ঘটনার পরদিন সকালে মৃত মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা খোঁজাখুজির একপর্যায়ে বাগানে ঝুলন্ত স্বামীর মরদেহ দেখতে পান। স্বামীকে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বের হতে দেখেছিলেন মেঘনা। তাই এ জাহাঙ্গীরকে হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে গত ১৭ নভেম্বর নিহতের বাবা বদের আলী ওরফে বুদু কবিরাজ বাদী হয়ে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তবে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর আড়ালে থেকে যান। গ্রেফতার জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় এসে আত্মগোপন করেন। এখানে একটি গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন। তবে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গভীর তদন্তে সামনে আসে। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামি জাহাঙ্গীরের নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
এমএমআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।