ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অটোরিকশা চোর চক্রের ৬ সদস্য আটক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
অটোরিকশা চোর চক্রের ৬ সদস্য আটক

ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে ১৪টি চোরাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জব্দসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যার) -৩।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতরে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ রিকশা চোর চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়।

 

আটক আসামিরা হলেন- মূলহোতা মো. কামাল হোসেন কমল (৩৫), মো. রাশেদ (২৮), মো. আলম হাওলাদার (৩৬), মো. কাজল (৩৬), মো. ফজলু (৩০) ও মো. সাজু (২৫)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রঙয়ের ব্যাটারিচালিত ১৪টি অটোরিকশা, ১৮টি চার্জার ব্যাটারী, ৬টি মোবাইল ফোন, ১টি চাবি এবং নগদ ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ও গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতরে চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই চোরাই ও ছিনতাই করা অটোরিকশা মজুদ করে রাখে। এরপরে সেগুলোর রঙ পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছিলো।  

আটক আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রের মূলহোতা কমল। সে ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। তারপর রিকশার মালিক তার কাছ থেকে চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য আদায় করে। সে ধার করে ওই চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য মালিককে পরিশোধ করে। ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সে চুরি যাওয়া রিকশা খুজতে থাকে।  রিকশা খুজতে গিয়ে অপরাধ জগতের সদস্যদের সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর সে নিজেই রিকশা চুরিকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। সে ১২ বছর ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিলো।

তিনি আরও জানান, প্রথমে কমল নিজেই একা রিকশা চুরি করে। সে নতুন রিকশায় উঠে রিকশা চালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে রিকশা চালককে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনও রিকশা চালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভিজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করত। এরপর সে রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলেন। এই চক্র অভিনব কায়দায় রিকশা চুরি করত। তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। সাজু এই রিকশা চালিয়ে যেত। পথেমধ্যে নতুন রিকশা পেলে তারা নজরদারী করত। তারপর কমল রিকশার ড্রাইভারকে বলত সামনের রাস্তায় একটি বাসা থেকে আমার কিছু মাল তুলবো। উক্ত মালগুলো কাছাকাছি আরেকটি বাসায় পৌঁছে দিলে সে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুন বেশি ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিত এবং রিকশা চালকের কাছ থেকে  তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করত। বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে সহজ সরল রিকশা চালক তার কথায় রাজি হয়ে যেত। তারপর তার সুবিধামত একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে চালককে বলত আপনাকে বাসার ভিতরে ঢুকে মালামাল নিয়ে আসতে হবে। রিকশার চালক বাসার ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই চক্রের অপর সদস্য ফজলু রিকশা নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতো। তারপর কমল মালামালসহ রিকশা চালককে নিয়ে আসলে রাস্তায় রিকশা না পেয়ে চালক হাউমাউ করে কান্না শুরু করত। তখন কমল রিকশা খোজার নাম করে তাদের চক্রের রিকশা নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেত।  

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, এরপর এসব চুরি যাওয়া রিকশা রাশেদ, আলম হাওলাদার ও কাজল একটি গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করত। এরপর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিকশা রেখে মালিককে রিকশা নিয়ে যেতে বলত। এই কৌশলে রিকশা চুরি করার পর সে তার সহযোগীসহ একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেফতার হয়। তারপর সে তার চুরির কৌশল পরিবর্তন করে। সে ও তার সহযোগীরা অধিক ভাড়ায় একটি রিকশায় উঠে চালককে নির্জন স্থানে নিয়ে তাকে মারধর করে হাত পা বেধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত।  

তিনি জানান, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, চুরির পর রিকশার রং পরিবর্তন করে খোলা বাজারে রিকশাটি বিক্রয় করে দিত। কখনও রিকশার মোটর পার্টস খুলে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রয় করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে গাড়ি চুরি, চোরাই গাড়ি নিরাপদ হেফাজতে রাখা, চোরাই গাড়ি বিক্রয় ইত্যাদি কাজে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। চক্রের সকলেই রিকশা চালনায় পারদর্শী।

আটক কমল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিগত ৭ বছর ধরে ৫০০ এর অধিক ব্যাটারী চালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। সে এসব রিকশা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৮টি চুরি মামলা এবং ফজলুর নামে ১ টি চুরি ও ১টি মাদক মামলা রয়েছে।  

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, চক্রের মূলহোতা কামাল হোসেন কমল, ফজলু ও সাজু গত ১৭ আগস্ট র‌্যাব-৩ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজের সাথে লিপ্ত হয়।

আটক আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
এসজেএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।