ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৩
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার

ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পরিবারের ব্যয় অনেক বেশি। বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা-সংক্রান্ত গবেষণা করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক। প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ও হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এনজিও স্কুলে ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিনগুণ বেশি এবং বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এ ব্যয় নয়গুণ বেশি। পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার। নেপালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় ৬৩ শতাংশ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় ৭৫ শতাংশ যেখানে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে এ ব্যয় মাত্র আট শতাংশ। দুটি প্রধান শহরে শীর্ষ চতুর্থাংশ পরিবারের দ্বারা মাসিক ফি দেওয়ার হার নিম্ন চতুর্থাংশ পরিবারের তুলনায় চার থেকে আট গুণ বেশি।

এতে বলা হয়, ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার নিচের ২০ শতাংশ পরিবারের তুলনায় সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সব স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে। ২০১৭-১৮ সালে পরিবার সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন স্কুলে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করে।

শিক্ষা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবার ঋণ নেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ছয় শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়। ভুটান , পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারি শিক্ষার্থী ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বাড়া ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি এর ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এর ফলে কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছিল।

বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা ফি এর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এ প্রতিবেদনের জন্য করা একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম ফি'র বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজারটি স্কুল শুধুমাত্র ফি'র ওপর নির্ভরশীল। আফগানিস্তান, ভারত এবং নেপালের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ফি'র ওপর নির্ভরতা এবং সরকারি তহবিলের অভাবকে তাদের কর্মসূচির উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করে।

রিপোর্টে বলা হয়, আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের লক্ষ্য বেসরকারি স্কুলগুলোর জন্য পুঁজির প্রাপ্তি বাড়ানো। ভারতে সমীক্ষার অন্তর্ভূক্ত ৭৩ শতাংশ স্কুলের জন্য ঋণ দেওয়ার মতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা কঠিন ছিল, যদিও তিন চতুর্থাংশ স্কুলেরই তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণের প্রয়োজন ছিল। ইদানিং ধর্মীয়, দাতব্য বা স্কুলে সমতার উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রবেশ করছে। এডিফাই এবং অপরচুনিটি ইন্টারন্যাশনাল সবচেয়ে বড় শিক্ষা সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বল্প ফি'র বেসরকারি স্থুলকে প্রযুক্তি, চলতি মূলধন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য ঋণ দেয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন- পাকিস্তানের কাশফ মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক স্কুলের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ব্যবসা প্রশাসনে মালিকানার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। পাকিস্তানের ২৫০টিরও বেশি গ্রামজুড়ে বেসরকারি স্কুলকে দেওয়া শর্তহীন নগদ অনুদানের একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যখন একটি গ্রামের সব স্কুল অনুদান পায় তখন স্কুলগুলো প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য নিজেদের মানের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে।

রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, কোভিড-১৯ বেসরকারি স্কুলের অর্থের ওপর একটি বড় মূল্য আদায় করেছে। ভারতের ন্যাশনাল ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুলস অ্যালায়েন্স দেখেছে তাদের নেটওয়ার্কের তিন হাজার ৬৯০টি স্বল্প - ফি'র বেসরকারি স্কুলের মধ্যে ২০২০-২০২১ সালে মাত্র ৪ শতাংশ স্কুল ১০ শতাংশের বেশি ফি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ সমস্যা নিয়ে সরকারি প্রতিক্রিয়া ছিল অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশে সরকারি শিক্ষকরা তাদের বেতনসহ চাকরির নিরাপত্তা পেয়েছিলেন, কিন্তু এনজিও'র শিক্ষকরা তাদের বেতনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পেতেন। পাকিস্তানে বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তাই পায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।