ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অংশ না নিতে পারলে বিএনপি ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ, জামায়াতে ইসলামী ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পেতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টি পেতে পারে ২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় আর্কাইভস অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠানটি ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।
জরিপটিতে অংশ নেন ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা। এতে ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রামের এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ শহুরে বাসিন্দা ছিলেন, যারা ভোট দেওয়ার যোগ্য। জরিপের নমুনা কাভার করেছে দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি জেলা এবং ৫২১টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় রাজনীতিতে বিএপির প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ, যেখানে জামায়াতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া এনসিপির প্রতি সন্তুষ্ট ৯ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রতি সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।
জরিপ থেকে জানা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের অসন্তুষ্টিও জানিয়েছেন। যেখানে বিএনপির কার্যক্রমে একদমই সন্তুষ্ট নন ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। জামায়াতের প্রতি ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, এনসিপির প্রতি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের প্রতি ২০ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ একদমই সন্তুষ্ট নন।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়, এবারের নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে আগ্রহী। যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ভোট দেবেন দলীয় প্রতীক দেখে।
যারা ভোটদানের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মার্চ মাসে প্রথম রাউন্ডে যেখানে ফলাফল ছিল ১৪ দশমিক ০ শতাংশ, তা বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিএনপির ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। আর এনসিপির প্রতি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে।
জরিপ অনুসারে, বিএনপির সমর্থন বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার সঙ্গে কমে, যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সমর্থন সবচেয়ে বেশি তরুণ ও অধিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে। বিএনপি ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয় পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত দল হিসেবে, যার পরে আছে জামায়াতে ইসলামী ২৮ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ৪০ শতাংশ বিশ্বাস করে, বিএনপির সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা আছে পরবর্তী সরকার গঠনের। এটি রাউন্ড ১ থেকে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিভাগীয় পর্যায়ের ভোটের জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ছয়টি বিভাগে এগিয়ে আছে বিএনপি, এছাড়া রংপুরে জামায়াত এবং বরিশালে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
আগামী সরকার গঠনে সবথেকে যোগ্য দল কোনটি, এমন প্রশ্নের উত্তরে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বিএনপি সবচেয়ে বেশি যোগ্য। জামায়াত ইসলামীকে যোগ্য মনে করেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ। পাশাপশি আওয়ামী লীগকে যোগ্য মনে করেন ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, এনসিপিকে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দলকে যোগ্য মনে করেন ১০ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সরোয়ার। জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, ব্রেইন-এর নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান, সাংবাদিক জাইমা ইসলাম।
আরকেআর/এইচএ/