ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতেই দেশের রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় সামনে চলে এসেছেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদটির দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবভবনে কে যাচ্ছেন, রাজনীতি সচেতন সবার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে।
চলতি বছর এপ্রিলে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের চলমান টানা তিন মেয়াদের সরকারের প্রথম বছরে দলের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। এরপর জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে রাখা হয়। সংবিধান অনুযায়ী দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান নেই। তাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পর নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সংবিধান সংশোধন করে এক ব্যক্তির দুইবারের অধিক রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান যুক্ত করলে বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে আবারও এই পদে প্রার্থী করা যাবে। তবে আপাতত সংবিধান সংশোধনের সম্ভাবনা নেই বলে আওয়ামী লীগের নীতিনিধারণী সূত্র থেকে জানা গেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সম্প্রতি সরকারের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী আগামী ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সময় যত এগিয়ে আসছে এই পদটি নিয়ে আলোচনাও তত বাড়ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে এই আলোচনাটি জোরালো হয়ে উঠেছে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করবে, তিনিই সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত থাকে। সরকারের প্রধান প্রধানমন্ত্রীই হন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই রাষ্ট্রপতি অধিকাংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ বর্তমানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো দিক থেকে সংকট তৈরির চেষ্টা করা হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপিসহ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি তুলেছে। নির্বাচনের সময় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন নেমেছে দলগুলো। এই পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংকটমুক্ত হওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে একজন দক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার ওপর গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ।
দেশের পরর্বতী রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনেকদিন ধরেই আলোচনায় আছেন। বিশেষ করে আবদুল হামিদ দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর শিরীন শারমিনের নাম আলোচনায় আসে। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার স্পিকার হন। তখন থেকেই এই আলোচনা আছে। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বর্তমান মন্ত্রিসভার দুই জন সদস্য এই আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়া সাবেক একজন মন্ত্রীও রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে পারেন বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সদস্যের নামও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্যও। তবে কে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন এবং কাকে রাষ্ট্রপতি করা হবে সেটা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কোনো সংকট তৈরি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিনি সংকট থেকে উত্তরণে অবস্থান নিতে পারবেন, তেমন কাউকেই এ পদে বসাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক কিছু বিবেচনা করেই রাষ্ট্রপতি পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদটিতে আওয়ামী লীগ কাকে নির্বাচিত করবে তা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। তিনি সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করেই সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে এই পদে নির্বাচিত করবেন। তিনি বিশ্বস্ত, দলের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ ও অনুগত ব্যক্তিকেই বিবেচনা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
এসকে