ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের একটি চক্র। তারা ইসলামী ব্যাংক ও দেশের শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সারা দেশে পোস্টার লাগিয়ে গুজব ছড়িয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, চক্রটি দেশ ও বিদেশে বসে ব্যাংকে টাকা নেই, রিজার্ভ নেই, তাই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে ফেলার মতো বিভিন্ন গুজব রটাচ্ছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন—মোহাম্মদ নুর উন নবী, আফসার উদ্দিন রোমান, আবু সাঈদ সাজু, স্বাধীন মিয়া ও আব্দুস সালাম।
সম্প্রতি ব্যাংক খাত নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতাররা দেশে ও বিদেশে বসে গুজব ছড়িয়েছে। পাশাপাশি তাদের সহযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংক খাত নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে।
চক্রটি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে অনুৎসাহিত করছে উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, এই চক্রের অনেকেরই নাম পেয়েছি। এই চক্রের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। আমরা সবার নাম পেয়েছি, দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত এই চক্রের বেশ কয়েকজনে নাম পেয়েছি। তাদের নিয়েও কাজ চলছে। মামলায় তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই চক্রের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, জামায়াত শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়া অন্য কোনো দলের সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি একটি গুজব। আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলনে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের একটি স্বনামধন্য ব্যাংক। ব্যাংকটি এক সময় ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত মীর কাশিম আলীসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলে ছিল।
ব্যাংকটি পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধীদের দখল থেকে মুক্ত হলে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকে। দেশ বিরোধী চক্রটি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য দেশের আর্থিক খাতকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা বলে মন্তব্য করে ডিবি প্রধান বলেন, তারা এস আলম গ্রুপসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানদের নামে ব্যাংক সংক্রান্ত মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। ব্যাংক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালালেও পরবর্তীতে এর প্রেক্ষিতে কোনো ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ তারা দিতে পারেনি।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, তারা প্রবাসীদের রেমিটেন্স না পাঠানোর বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, ব্যাংকে টাকা নাই—এমন নানাবিধ গুজব রটানোর কাজে জড়িত। এই সব গুজবের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
পিএম/এমজেএফ