রাজবাড়ী: রাজবাড়ী শহরের ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় বসে পুরাতন বিদেশি শীতের কাপড়ের দোকান। রেল লাইনের ওপড়ে বাশের মাচায় করে এভাবে বিক্রি হয় জন্য এই বাজারকে অনেকে রেলপ্লাজা বলে।
অস্থায়ী এসব দোকানে কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পুরাতন ব্লেজার, জ্যাকেট, সয়েটার, টাওজার, মাফলার, টুপি, হুডি, কম্বলসহ অনান্য শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে ৩-৪ লাখ টাকার বেশি কাপড় বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রেল লাইনের ওপর ৪২টি পুরাতন কাপড়ের দোকান বসেছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রং-বেরংয়ের শীতের পোশাক। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো এসব দোকানে তাদের সাধ্যের মধ্যে শীতের কাপড় কিনছেন।
প্রতি শীতের মৌসুমে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে পুরাতন শীতের কাপড়ের বেচা-কেনা। ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুসারে, প্রতিটি দোকানে বর্তমানে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার বিক্রি হয়। সেই হিসেবে ৪২টি দোকানে প্রতিদিন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এ হিসেবে ৪ মাসে ৪২টি দোকান থেকে ৫ কোটি ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয় বলে ধারণা করা হয়।
রেল লাইনের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা করেন মো. লিটন সেখ। তিনি বলেন, রাজবাড়ী শহরের ১ নম্বর রেলগেট থেকে ২ নম্বর রেলগেট এর মধ্যে প্রতি বছর শীতের মৌসুমে আমরা পুরাতন শীতের পোশাকের ব্যবসা করি। এখানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে আকার আকৃতি, রং ও মান ভেদে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটি শীতবস্ত্র বিক্রি হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতা এখানে পুরোনো শীতের পোশাক কিনতে আসেন। এখানে কমদামী কাপড়গুলো ৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, মাঝারী ধরনেরগুলো ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আর কিছু ভালো মানের কাপড় ও কম্বল ১ হাজার বা তার বেশি দামেও বিক্রি হয়ে থাকে।
আরেক ব্যবসায়ী সাদ্দাম সেখ বলেন, আমাদের এখানে কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পুরাতন ব্লেজার, জ্যাকেট, সয়েটার, টাওজার, মাফলার, টুপি, হুডি, কম্বল ও নারীদের নানা রকমের শীতের পোশাক বিক্রি করি। প্রতিদিন একেকটি দোকানে অন্তত ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন আমাদের ২ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
আরেক ব্যবসায়ী উজ্বল মোল্লা বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে আমরা অক্টোবর মাস থেকে ব্যবসা শুরু করি। পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা। এখানে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কেনাকাটা করে থাকেন। তবে আমরা স্বল্প মূল্যে শীতের কাপড় বিক্রি করি। দরিদ্র মানুষগুলো কম টাকায় শীতের কাপড় কিনতে পারেন।
এখানে শীতের একটি জ্যাকেট কিনতে এসেছেন রিকশাচালক শফি মোল্লা (৪৫)। তিনি বলেন, শীতের সময়ে রিকশা চালাতে বেশি করে শীতের জামা কাপড়ের দরকার হয়। নতুন পোশাকের দোকানে একটি জ্যাকেট কিনতে গেলে হাজার টাকার বেশি লাগে। আর এখানে আমি মাত্র ২৫০ টাকায় মোটা কাপড়ের জ্যাকেট কিনতে পেরেছি।
মুদি দোকানী সাফায়েত মোল্লা (৫০) তার ছেলের জন্য একটি ব্লেজার কিনতে এসেছেন রেলপ্লাজায়। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলের জন্য ৪০০ টাকা দিয়ে একটি ব্লেজার কিনেছি। এসব দোকানে বিদেশ থেকে আসা ভালো মানের শীতবস্ত্র কেনা যায়।
জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের গৃহিনী শেফালী বেগম এসেছেন তার জন্য একটি সয়েটার কিনতে। তিনি বলেন, আমি আমার জন্য একটি সয়েটার কিনলাম মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে। আমাদের মতো গরীব মানুষ নতুন শীতবস্ত্র কি কিনতে পারি !
পুরাতন কাপড়ের পাইকারী বিক্রেতা মো. শাওন সেখ বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে এখানকার দোকানীদের কাছে ৩০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের পুরাতন বিদেশি কাপড় বিক্রি করেছি। সেগুলো চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়। আমার পাশাপাশি অন্যন্য ব্যবসায়ীরাও চট্রগ্রাম বা ঢাকার পাইকারদের কাছ থেকে সরাসরি পুরাতন কাপড়ের বেল্ট কিনে এনে ব্যবসা করে। প্রতিদিন একজন ব্যবসায়ী কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেন। এতে ২ হাজার বা তার বেশিও আয় হতে পারে। রাজবাড়ীতে এই রেলমার্কেট অনেক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এফআর