ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বাবা মারা যাওয়া পর পরিবারের হাল ধরতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেজুয়ানুল হক তুষার (২৫)। দেশে ফিরে এসে নববধূকে ঘরে তোলার কথা ছিল তার।
কিন্তু হঠাৎ এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। কাতারে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনায় মারা যান তুষার। নিহত হওয়ার ৯ দিন পর তার মরদেহ নিজ দেশ ফিরে এসেছে। আর ছেলের মরদেহের কফিন দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তুষারের মা আখিনূর আক্তার রেখা । কফিন জড়িয়ে ধরে অনবরত কেঁদে বুক ভাসান।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরের বোর্ডিং মাঠ এলাকায় তুষারের মরদেহ তার বাড়িতে এসে পৌঁছালে এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিহত তুষার ওই এলাকার মৃত হামিদুল হকের ছেলে।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে কফিন নামানোর পরই মা আখিনূর সন্তানের মরদেহের কফিন জড়িয়ে ধরেন। একমাত্র বোন জুঁই তার একমাত্র ভাইয়ের মরদেহের উপর কান্নায় লুটিয়ে পড়েন। এসময় সারাবাড়ি জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়।
পরে ট্যাংকের পাড় মাঠে বাদ আসর তুষারের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে শহরের শেরপুর মীর শাহাবুদ্দিন (র.) মাজার কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
তুষারের ভগ্নিপতি শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া রাকিব জানান, , গত ৭ বছর ধরে কাতারে তুষার একটি ফুড ডেলিভারি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। গত ০২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার দিকে কাতারের ছালোয়া রোডে ট্রাকচাপায় প্রাণ যায় তুষারের। সকালে মোটরসাইকেলে খাবার ডেলিভারি দিতে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ট্রাকটি তুষারকে চাপা দেয়। সে দেশের পুলিশ ঘাতক ট্রাকচালককে গ্রেফতার করেছে। ট্রাক চালকটি ভারতীয়।
আপ্লুতকণ্ঠে রাকিব আরও জানান, প্রবাসে যাওয়ার পর গত ৭ বছরে একবারও দেশে আসেনি। গত ৬ মাস আগে মোবাইলে পারিবারিকভাবে জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়ায় বিয়ে করেন তুষার। কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে নববধূকে ঘরে তোলার কথা ছিল তার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জীবিত অবস্থায় দেশে ফেরা হয়নি তুষারের। নববধূও ঘরে তোলা হলো না। একমাত্র ছেলের বিয়ের ধুমধামে আয়োজন করবেন আর পুত্রবধূকে ঘরে তুলে আনবেন স্বপ্ন ছিল তুষারের মায়ের । কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
>>> নববধূকে বরণ করা হলো না কাতারপ্রবাসীর
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এসএএইচ