ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে ২০২২ সালে পানিতে ডুবে ১৬৭১ শিশুর মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
দেশে ২০২২ সালে পানিতে ডুবে ১৬৭১ শিশুর মৃত্যু

টাঙ্গাইল: ২০২২ সালে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে এক হাজার ৬৭১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন সমাজ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’।  

গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১টি মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের ওপর জরিপ করে তারা এই সংখ্যা পেয়েছেন।

 

মৃত্যুর কারণ হিসেবে মৃগী রোগী, আঘাত জনিত মৃত্যু বা দুর্ঘটনা, সাঁতার না জানা, অসচেতনতা এই চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬২.৩৬ শতাংশ ছেলে এবং ৩৭.৬৪ শতাংশ মেয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু ৯৬০ জন যা মোট মৃতের ৫৭.৪৮ শতাংশ।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইল শহরের শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মুবাশ্বির খান লিখিত বক্তব্যে জানান, দেশের মধ্যে কয়েকটি জেলায় সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩২ জন, দ্বিতীয়তে রয়েছে নেত্রকোনা ৬৭, এরপর যথাক্রমে কক্সবাজার ৬৫, চাঁদপুরে ৫৫ ও সুনামগঞ্জে ৫৪ জন।  

৬২.৫ শতাংশ ঘটনার জন্য দায়ী অসচেতনতা। এমনও দু-একটি ঘটনা দেখা গিয়েছে যেখানে বালতি কিংবা পাতিলের পানিতে ডুবেও শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। মা-বাবা বা শিশুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন বা বিশ্রামরত থাকেন তখনই সিংহ ভাগ শিশুর মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে সকালে কাজের সময় থেকে শুরু করে দুপুরের বিশ্রামের সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাঁতার না জানার কারণে পাঁচ বছরের ওপরে ৩১.০৭ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিশু মারা গিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে ২২৮ জন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে জুলাই মাসে ২০০ জন এবং সবচেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৫ জন। যা থেকে বোঝা যায় শীতকালের চেয়ে বর্ষা বা তুলনামূলক গরমের সময় পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গ্রামের শিশুদের নদী, পুকুর বা ডোবায় গোসল করতে গিয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করতে দেখা গিয়েছে। শহরের মারা যাওয়া বেশির ভাগ শিশুই পাঁচ বছরের ওপরের এবং সিংহ ভাগ সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুঈদ হাসান তড়িৎ জানান, পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংবাদ বিশ্লেষণ করে আমাদের এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অনেক ঘটনাই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি যেগুলো হিসেব করলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন মতে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটছে অসচেতনতার কারণে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুর যত্নে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সব সময় মা-বাবা বা অন্য কারও দায়িত্বে রাখা, পুকুর বা ডোবার চারপাশে বেড়া দেওয়া, দলবেঁধে বা একাকী শিশুকে জলাশয়ে গোসল করতে না দেওয়া বালতি বা পানিপূর্ণ পাত্র সব সময় ঢেকে রাখা, পাঁচ বছর বয়স হলে শিশুকে সাঁতার শেখানো, সাঁতার শেখার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, নদীপথে যাত্রার সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অবলম্বন করা, ঝুঁকিপূর্ণ নৌযাত্রা পরিহার করা, অভিভাবকদের সচেতন করা, পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ও পরে ভুক্তভোগী ও প্রতক্ষ্যদর্শীর করণীয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেওয়া, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা ব্যবহার করার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী গণসচেতনা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, শহরের শিশুদের বাধ্যতামূলক সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা, নিয়মিত তৃণমূল পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা, এ সম্পর্কিত কাজে আগ্রহী সমাজকর্মী ও সংগঠন সমূহকে যথাযথ সহযোগিতা করা।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ প্রকল্পের সদস্য মির্জা রিয়ান ও আতিয়া আদিবা জারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।