ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুদকের সার্বিক কার্যক্রমে গতি আসবে, আশা কমিশনের

সৈয়দ ঋয়াদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
দুদকের সার্বিক কার্যক্রমে গতি আসবে, আশা কমিশনের

ঢাকা: চলতি বছরের শুরু থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন থেকে শুরু করে সব ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। আগের চেয়ে দৈনিক অভিযানের সংখ্যাও বাড়িয়েছে কমিশন।

অভিযান ও দুদকের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে বাংলানিউজকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, কমিশনের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্থা সে কারণেই মানুষ দুদকে অভিযোগ করে প্রতিকার চায়। যে কারণে দুদক সেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। নতুন বছরে এসব কার্যক্রম বেড়েছে, অভিযানের সংখ্যাও বেড়েছে।

কমিশনের সীমাবদ্ধতার বিষয় সামনে এনে মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, কমিশন সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত। আপনারা জানেন গত বছর আমার উপসহকারী এবং সহকারী পরিচালক পদে বেশ বড় একটা নিয়োগ হয়েছে। প্রায় আড়াইশ কর্মকর্তা দুদকে নতুন যুক্ত হয়েছে। ফলে কমিশনের সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু আমরা দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ার কারণে অনেক অপরাধের বিষয়ে কাজ করতে পারি না।

বেশিরভাগ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করতে পারে না বলে মনে করেন দুদক সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে মানিলন্ডারিং আইনের তাদের এখতিয়ার সীমিত হওয়ার কারণে অনুসন্ধানের জন্য সব গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া দুদক বলছে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে কমিশনের এখতিয়ার না বাড়ালে দুদকের জন্য কাজ করা কঠিন।

দুদক কমিশনার জহুরল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু অভিযোগগুলো কমিশন গ্রহণ করতে পারে না। কারণ ভিত্তিহীন অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি। আবার অভিযোগের একটি বড় অংশ কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়াও একটি কারণ। আমরা তফসিলে নেই এমন আরও বেশ কিছু অভিযোগের এখতিয়ার চেয়ে আবেদন করেছি। সেগুলোর এখতিয়ার পেলে কমিশনের কাজের পরিধি আরও বাড়বে।

গত ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের অনুসন্ধান তদন্তের উপর ভিত্তি করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। দুদক থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত এক বছর দুদকে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পরে। অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষে ৯০১ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে সংস্থাটি, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।  

২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ছয় বছরে দুদকে জমা পড়া অভিযোগ ও অনুসন্ধানের পরিসংখ্যান বলছে, এই অর্ধযুগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিযোগ জমা পড়েছে ২০২২ সালে। করোনা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বছরটিতে। অুনসন্ধানের দিক থেকেও ছয় বছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংখ্যাক অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে সংস্থাটি।

দুদকেরে প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সংস্থাটিতে অভিযোগ জমা পড়ে ১৪ হাজার ৭৮৯টি, অভিযোগ থেকে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় ৫৩৩টি, যা মোট প্রাপ্ত অভিযোগের ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে ৮২২টি, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এটিই।

একইভাবে ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়ে। যা গত ছয় বছরের সর্বোচ্চ। এই সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যাক অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে, এক হাজার ৭১০টি। যা মোট অভিযোগের ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে অভিযোগ জমা পড়ে ১৬ হাজার ৬০৬টি, অনসন্ধানের জন্য নেওয়া হয় এক হাজার ২৬৫টি (৭ দশমিক ৬১ শতাংশ) এবং ২০১৭ সালে অভিযোগ পড়ে ১৭ হাজার ৯৮৩টি অুনসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় ৯৩৭টি (৫ দশমিক ২১ শতাংশ)।

২০২২ সালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সরাসরি অভিযোগ জমা পড়েছে ১১ হাজার ৭৯৬টি যা মোট অভিযোগের ৬০ শতাংশ। সরকারি দফতর বা সংস্থা থেকে অভিযোগ এসেছে ৯৬৭টি, যা প্রাপ্ত অভিযোগের ৫ শাতংশ, বেসরকারি দফতর সংস্থা থেকে ৩৮৭টি (২ শাতংশ), পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশনের প্রতিবেদন থেকে এক হাজার ৩৫৪টি (৭ শতাংশ), বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এক হাজার ৫৪৭টি (৮ শতাংশ), এনফোর্সমেন্ট থেকে ৫৮০টি ( ৩ শতাংশ) ও অন্যন্য মাধ্যমে ২ হাজার ৭০৭টি (১৪ শতাংশ)।

২০২২ সালে দুদক বিভিন্ন মামলায় আসামিদেরকে ২ হাজার ৬৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৩ টাকা জরিমানা করে। এই সময়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদালতের নির্দেশে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৯ হাজার ১৬৭ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সংস্থাটি। এছাড়া গত এক বছরে ৫৮৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক কর কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এসআর/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।