ঢাকা: রাজধানীর রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে দিন দিন রহস্যে বাড়ছে। আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে এসব ভিজিটিং কার্ড পাড়া-মহল্লার অলিগলির রাস্তায়, ফুটপাত ও গণপরিবহনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
গত তিন দিন সরজমিনে মিরপুর ১,২, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর, কালশী, পুরবী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, গাবতলী, মাজার রোড ঘুরে দেখা গেছে মেইনরোডসহ ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রহস্যজন ভাইদের ভিজিটিং কার্ড। মিরপুর ১০ ও ১ নম্বর ফুটওভার ব্রিজ ও বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসব কার্ড ফেলে রাখতে দেখা গেছে। কার্ডগুলোর উপরে লেখা থাকছে অরুণ দাদা, মাটি ভাই, ইমরান ভাই, হাসান ভাই, সিফাত ভাই, শিকদার ভাইসহ আরও অনেকে নাম ও ফোন নম্বর।
জানা যায়, দেহ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্র এসব ভিজিটিং কার্ড মিরপুরের পাড়া, মহল্লা অলি-গলিসহ রাস্তায় ফেলে রেখেছে। চক্রের সদস্যদের নাম ও ফোন নম্বর রয়েছে এসব ভিজিটিং কার্ডে।
সাম্প্রতিক সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস ও গণপরিবহনে ভিজিটিং কার্ড বিলি করছে এ চক্রের সদস্যরা। এরা মূলত যৌনকর্মীদের দালাল হিসেবে পরিচিত। দ্রুত যৌন ব্যবসা প্রচারের লক্ষে সম্প্রতি তারা এ কৌশল বেছে নিয়েছে। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, অভাব গ্রস্থ কর্মহীন নারী এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অভিনব কায়দায় প্রচারে নেমেছে চক্র। এরা রাতের আধাঁরে কিংবা নিরিবিলি সময়ে নতুন রঙিন ভিজিটিং কার্ড রাস্তায় এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে যাতে সহজেই পথচারীদের নজরে পড়ে। অনেকে এদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন। ফাঁদে পড়ে ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে।
ভিজিটিং কার্ডে পাওয়া এক ফোন নম্বরে প্রতিবেদক ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে তা রিসিভি করেন মধ্য বয়সী এক পুরুষ। তিনি জানান, স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটি পড়ুয়া ছাত্রী, ভাবি, বৌদি, রোহিঙ্গাসহ মধ্য বয়সি অনেক নারী তার কালেকশনে আছে। ঠিকানা জানতে চাইলে ওই পুরুষ (দালাল) সরাসরি ঠিকানা না দিয়ে শেওড়াপাড়া গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানা গেছে, ভিজিটিং কার্ডের নম্বর ধারীরা কয়েক ধাপে যৌনকর্মী সরবরাহ করেন। যৌনকর্মীকে ভিজিটরের বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া, যৌনকর্মী ও ফ্ল্যাট ভিজিটরকে নিরাপদে নিয়ে আসা হয়। হোটেল কক্ষে নিরাপদে সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে মিরপুরের কয়েকটি আবসিক হোটেল ও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যেই ঘুরছে যৌনকর্মীর দল। এদের কারো মুখ খোলা, কেউ কেউ মুখ ঢাকছেন কাপড় বা ওড়না দিয়ে। আবার অনেকে পড়ছেন বোরখা। পথচারীরা যখন ওভার ব্রিজ অতিক্রিম করেন, তখন তারা (যৌন কর্মীরা) তাদের নানান ধরনের অঙ্গ-ভঙ্গি, কু-ইঙ্গিত ও ইশারায় ডাকে।
অভিযোগ আছে, পুলিশের অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভুয়া সাংবাদিকরা মিরপুরের কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিচ্ছে।
ভুক্তভোগী মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা সোহরাব জানান, রাতের বেলায় যৌনকর্মীরা কয়েকটি গ্রুপ হয়ে কাজ করেন। এদের সঙ্গে ছিনতাইকারীদের সখ্যতা রয়েছে। কোনো গ্রুপ যদি কোনো খদ্দেরের খোঁজ পান, তারা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয় ছিনতাইকারীদের। এদের বেশির ভাগ খদ্দের আশপাশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, রিকশা চালক ও পোশাক শ্রমিক।
এ বিষয়ে শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ভিজিটিং কার্ড আমার নজরে এসেছে। আমি কার্ডের নাম্বারে ফোন দিলে এক ব্যক্তি জানান তাদের স্পট শেওড়াপাড়া। আমি ঘটনাটি মিরপুর মডেল থানাকে অবহিত করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার থানা এলাকায় চারটি আবাসিক হোটেল আছে। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় দুইটি হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এমএমআই/এসএম