ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি পরিবেশ সংঠনগুলোর 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি পরিবেশ সংঠনগুলোর 

ঢাকা: বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। বায়ুমানের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত চারটি নগরীর একটি।

গত জানুয়ারি মাসের বেশ কয়েকদিন ঢাকা বায়ুদূষিত নগরীর এক নম্বরে অবস্থান করেছে। এয়ারভিস্যুয়াল-র তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ২৪ দিনের মধ্যে ২৩ দিন ঢাকার বায়ুমান বিপদজনক পর্যায়ে ছিল।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সংলগ্ন স্বাধীনতা হলে ‘ঢাকার বিপদজনক বায়ু দূষণ রোধে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।  

উল্লেখ্য, বায়ুমান পরিমাপের একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হছে ‘একিউআই’ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স। বায়ুমানের সূচক বা একিউআই ০-৫০ হচ্ছে ভালো বা স্বাস্থ্যকর। ৫১-১০০ হলো মধ্যমমানের, ১০১-১৫০ হচ্ছে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১-২০০ হচ্ছে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ৩০১- হচ্ছে বিপদজনক। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাতাসের সর্বোচ্চ মান ছিল একিউআই ৬৩৫।

সংবাদ সম্মেলনে বায়ুমান বিপদজনক পর্যায়ে উপনীত হলে সবাইকে ঘরের ভিতর থাকতে বলা হয়। বাইরে হতে এবং বাইরে কাজকর্ম করতে কঠোর ভাবে মানা করা হয়। ঘরের জানালা এবং দরোজা বন্ধ রাখতে বলা হয়। বায়ুমান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হলে- যারা হাঁপানি ও নানাধরণের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগী এবং সংবেদনশীল তারা কোনোক্রমেই ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। অন্যেদের জন্য বের না হওয়া এবং বাইরে শারীরিক শ্রমের কাজ না করার জন্য বলা হয়।  

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বায়ু দুষণ রোধে হাইকোর্ট ১২ দফা নির্দেশে প্রদান করা হয়। কন্তু ১২ দফা নির্দেশনার কতোটা বাস্তবায়িত হয়েছে উদ্বেগ জানিয়েছেন উপস্থিত বক্তারা।  

বক্তারা বলেন, আমরা শুধু লক্ষ্য করছি বায়ুমান ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরমধ্যে আরেকধরণের বাস্তবতার উদ্ভব হয়েছে। বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ তোলা হলে একদল সরকার সমর্থক মনে করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতার পথ তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আরেকদল এটাকে সরকারের ব্যর্থতার উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। এই দু'পক্ষের কারো সঙ্গেই আমরা একমত নই। উন্নয়ন কাজ চলাকালে দুষণ বাড়ার সম্ভবনা তৈরি হবে। তবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করেই সব ধরনের দুষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বড় শহরগুলোতে দূষণ রোধ করতে হলে সবুজায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি ইটভাটার আশপাশ এলাকাগুলোতে যদি গ্রীনবেল্ট করা হত তাহলে ভাটার দূষণ থেকে আমরা কিছুটা নিরাপদ থাকতে পারব। তবে আমাদের দেশে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে সবুজায়ন করার থেকে ধ্বংসের প্রতি প্রবণতা বেশি। শহরের বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য যে গ্রীন বেল্ট করা প্রয়োজন এমন কোনো পরিকল্পনাই আমাদের নেই।  

বায়ুদূষণ ঠেকাতে কৃত্রিম বৃষ্টির (আর্টিফিশিয়াল রেইন) প্রয়োজনীয়তা আছে উল্লেখ করে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ু দূষনের বর্তমান প্রধান উৎস হচ্ছে রাস্তা। কারণ রাস্তায় বেশির ভাগ সময় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়। ঢাকা শহরের রাস্তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খোড়াখুড়ির থাকে। আর এর থেকেই পরিবেশে ধুলবালি বেশি ছড়ায়। জানুয়ারি মাসে ৯ দিন ঢাকা বায়ুমান সূচক মান ৩০০ এর বেশি ছিল। আর ১২ জানুয়ারি ছিল ৬৩৫। যা বায়ুর মান সূচকে সবথেকে ভয়াবহ। এর থেকে বাচার জন্য সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ সমাধান হচ্ছে পানি ছিটানো। সাধারণত শীতকালে বায়ু দূষণের মাত্রা কিছুটা বেশি থাকে। কারণ সে সময় বায়ু শুষ্ক থাকে এবং ধূলাবালি বেশি থাকে। আর রাস্তা খোড়াখুড়ির মাধ্যমে এ দূষণ ছড়াচ্ছে। যেহেতু ডিসেম্বর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। তাই সরকারের উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে বহির বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আর্টিফিশিয়াল রেইনের ব্যবস্থা করা। যাতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি কিছুটা কমে।  

দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর থেকে যে বায়ুদূষণ হচ্ছে তার জন্য সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে সাধারণ মানুষ- এমন মন্তব্য করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, সরকারকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উন্নয়নের কারণে সব থেকে বেশি স্বাস্থ ঝুকিতে আছে সাধারণা মানুষ। আমি মনে করি বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেখানে রাস্তা খোড়াখুড়ির কাজ হচ্ছে তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে পরিবেশ দূষণ বেশি হচ্ছে। সারা বছরই দেখা যাচ্ছে কোনো না কোন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। যেটার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ হচ্ছে।  

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডব্লিউবিবি ট্রাষ্ট, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), জনউদ্যোগ, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন, আইইডি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, ঢাবি পরিবেশ সংসদের পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সঞ্চালনা করেন জনউদ্যোগের জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের পরামর্শক আজিজুর রহমান খান আসাদ এবং পরিবেশ আন্দোলনের অন্যান্য নেতারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
ইএসএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।