হবিগঞ্জ: ‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি’- সবার প্রিয় ‘কাজের লোক’ ছড়ার এই লাইনটি পড়লে অবধারিতভাবেই আমাদের ভাবনায় চলে আসে মধু! পৃথিবীর পতঙ্গ পরাগী ৮৭ শতাংশ ফসলের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই পরাগায়ন সংঘটিত হয় মধু দ্বারা।
সরিষার বেলায় এই মৌমাছি মূখ্য পরাগায়নকারীর ভূমিকা পালন করে।
মো. ছুরত আলী (৬০) ১৭ বছর ধরে মধু উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মৌমাছি, মধু ও সরিষার সঙ্গে এক অন্যরকম ভালোবাসার সম্পর্ক দেখে এলাকাবাসী তার নাম দিয়েছেন ‘মধু মিয়া’।
শুধু জীবিকার জন্য নয়, ছুরত আলী মৌ চাষকে মনে করেন এটি তার শেষ বয়সের ‘ইবাদত’। যে কারণে তিনি তার উৎপাদিত মধুতে ভেজাল মেশান না সামান্য পরিমাণও।
ছুরত আলীর বাড়ি হবিগঞ্জ জেলা শহরের ইনাতাবাদ এলাকায়। এবার লাখাই উপজেলার সাতাউক মাঠে সরিষা ক্ষেতে ২৯টি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন তিনি। এতে ভালো লাভ হওয়ায় সরিষা ও মৌচাষে স্থানীয়দের আগ্রহ বেড়েছে।
২৯টি মৌ-বাক্স থেকে এ মৌসুমে দ্বিতীয়বার মধু আহরণ করা হয়েছে। দু’দফায় সেখান থেকে ১৫০ লিটার মধু সংগ্রহ হয়। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একবার মধু সংগ্রহ করবেন। চলতি মৌসুমে তিনি আরও ১০ দফায় মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
বাজারে প্রতি কেজি মধু ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ মৌসুমে তিনি অন্তত ৬০০ লিটার মধু পাবেন। মৌ-বাক্সগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেখানে তিনজন লোক কাজ করছেন নিয়মিত। একবার বাক্স বানানোর পর এতে আর তেমন খরচ নেই।
মধু আহরণের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, ক্ষেতের পাশে প্রথমে চাকের বাক্সে একটি রাণী মৌমাছি রাখা হয়। রাণী মৌমাছিকে দেখে সেখানে মৌমাছিরা আসতে থাকে। বাক্সের নিচে রাখা ছিদ্র দিয়ে মৌমাছি আসা-যাওয়া করে। ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের পর মৌমাছিরা চাকের বাক্সে আসে। মৌমাছির তাপ ও বাতাসের মাধ্যমে ৬-৭ দিন পর তা গাঢ় হয়ে মধুতে পরিণত হয়।
ছুরত আলী বলেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় খাবার ছিল মধু। সেই বিষয়টি বিবেচনায় আমি আমার মধুতে সামান্য পরিমাণ ভেজাল মেশাই না। এই মধু চাষকে আমি আমার শেষ বয়সের ‘ইবাদত’ মনে করি। মৌচাষের মাধ্যমে আমার ৫ সদস্যের পরিবারেরও জীবিকা নির্বাহ হয়। ’
উৎপাদিত মধু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুন্দরবনে মধু আহরণ হয় তিন মাস। কিন্তু সারাবছরই দেশজুড়ে সুন্দরবনের নাম ব্যবহার করে অনেকে মধু বিক্রি করেন। কিন্তু ছুরত আলী মৌসুম ছাড়া কখনও মধু বিক্রি করেন না।
মধুর গুণগত মান ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ছুরত আলী জানান, শতভাগ প্রাকৃতিক মধু পাত্রে রাখলে কয়েকদিনে সেটি জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। আবার রোদে অথবা গরম পানিতে মধুর পাত্রটি রাখলে অল্প সময়েই সেগুলো তরলে পরিণত হয়। তবে ভেজাল মিশ্রিত মধুর ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। ভেজাল মধু শক্ত হলে আর তরল হয় না। তবে সরাসরি আগুনে দিলে মধুর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৩
আরএ