ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পোড়াদহ মেলা

৪০ কেজির ব্ল্যাক কার্পের দাম ৮০ হাজার টাকা!

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
৪০ কেজির ব্ল্যাক কার্পের দাম ৮০ হাজার টাকা!

বগুড়া: প্রায় চারশ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ায় প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা। বগুড়ার পোড়াদহ মেলা মানেই বিশাল আকৃতির, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মেলা।

প্রতি বছর এই মেলাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে মাছের বাজার। মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে বড় আকৃতির বাঘাইড় মাছ। তবে, বর্তমানে বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। তাই গত বছর মেলায় বাঘাইড় মাছ প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। চিঠিতে বলা হয়, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০০২ অনুযায়ী মেলায় মহাবিপন্ন বাঘাইড় কেনাবেচা করা হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এবার মেলার প্রথম দিনেই সবার নজর কেড়েছে ১ মণ (৪০ কেজি) ওজনের বিশাল একটি ব্ল্যাক কার্প মাছ। যেটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। সজীব হাসান নামে একজন ক্রেতা মাছটির ৪৮ হাজার টাকা দাম তুললেও দিতে রাজি হননি বিক্রেতা বজলুর রহমান।

অপরদিকে ২৪ কেজি ওজনের আরেকটি ব্ল্যাক কার্পের দাম হাঁকা হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। মাছটি কিনতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকিয়েছেন আবু সাঈদ নামে এক ক্রেতা। বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম ২২ হাজার টাকার কমে মাছটি বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এসে দেখা মেলে বড় এসব মাছের।



সরেজমিনে দেখা যায়, পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণে কয়েকশো খুচরা মাছ বিক্রেতা এসেছেন। সারিবদ্ধভাবে এসব ব্যবসায়ী দোকান বসিয়েছেন। দোকানে মাঝারি, ছোট বিভিন্ন জাতের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। মেলার পূর্বপ্রান্তে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে বসেছেন একাধিক দোকানি।

তাদেরই একজন বজলুর রহমান। তিনি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার মোহমায়া গ্রাম থেকে ব্ল্যাক কার্প মাছ পোড়দহ মেলায় বিক্রি করতে এনেছেন। বিশাল আকারের মাছটি দেখতে সকাল থেকেই ভিড় করছেন ক্রেতা সাধারণের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। ক্যামেরায় মাছের ছবি ধারণ করছেন তারা। জহুরুল ইসলামের দোকানে গিয়েও দেখা যায় একই দৃশ্য।

বিক্রেতা বজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ এলাকার বাসিন্দা তিনি। প্রতিবছর এ মেলায় বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। এখানে বড় আকারের মাছ বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতারা দামাদামি করলেও তারা বড় আকারের মাছ কিনতেই বেশি পছন্দ করেন। তাই এবারো তিনি বিভিন্ন জাতের বড় মাছ মেলায় উঠিয়েছেন।

বজলুর রহমান আরও জানান, ২ হাজার টাকা কেজি হিসেবে ব্ল্যাক কার্প মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ক্রেতা মাছটি কিনতে দাম হাঁকিয়েছেন। এরমধ্যে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টাকা দাম বলেছেন।

রুবেল মিয়া, মুকিদ হাসান, কবির হোসেনসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, গাঙচিল, চিতল, বোয়াল, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ওজনে ৫-২৫ কেজি পর্যন্ত।

তারা জানান, প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৬০০, মৃগেল ২৫০-৩০০, গাঙচিল ৩০০, চিতল ৩০০-৫৫০, বোয়াল ৬০০-১২০০, হাঙড়ি ২০০-৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০-৩৫০, সিলভার কার্প ৩০০-৩৫০, বিগহেড ২৫০-৪০০, কালিবাউশ ২৫০-৪০০, পাঙ্গাস ১৫০-৪০০ টাকা।

মেলায় আসা আহম্মেদ খাজা, ইসতিয়াক হোসেন, তোজাম্মেল খানসহ কয়েকজন ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর আমরা এই মেলায় মাছ কিনতে আসি। মেলায় বিগত বছরগুলোতে বড় বড় মাছ বেশি উঠতো। এবারের মেলায় তুলনায় বড় মাছ কম উঠেছে।

আহম্মেদ খাজা ১৩ কেজি ওজনের একটি বিগহেড মাছ কিনেছেন। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছেন তিনি। মেলায় এসে মাছের দরদাম করছেন। কয়েকটা মাছের দোকান ঘুরেই পছন্দমতো একটা বিগহেড মাছ কিনেছেন। বিভিন্ন দোকান ঘুরে কোনোটা দামে আবার কোনোটা মনে মিলছিল না তার। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। এখন কিছু মিষ্টি নিয়ে ফিরবেন বলেও জানান আহম্মেদ খাজা।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, অনেকে কেবল মেলায় অধিক লাভের আশায় মাছ বড় করেন। মেলায় বিক্রির জন্য বেশ আগে থেকেই নদী থেকে বাঘাইর, আইড় ইত্যাদি মাছ ধরে পুকুরে বা জলাশয়ে বেঁধে রাখা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগঞ্জের সবাই তাদের মেয়ে, জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করেন। অতিথিদের বড় আকৃতির মাছ, মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
কেইউএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।