ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

গাজীপুরে মাটি কাটার মহোৎসব, হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
গাজীপুরে মাটি কাটার মহোৎসব, হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি

গাজীপুর: গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শতশত বিঘা কৃষি জমি, পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মানচিত্র থেকে উধাও করে দিচ্ছে কৃষি জমি। যদিও কৃষি জমি রক্ষায় সরকারের কড়া নির্দেশ রয়েছে। এরপরও সেগুলো রক্ষা হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী বারবার কৃষি জমি রক্ষার তাগিদ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) কোনাবাড়ী ভূমি অফিসের  আওতাধীন বাইমাইল নদীরপাড় এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপের দক্ষিণ পাশে তুরাগ নদ ঘেঁষে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। সংশ্লিষ্টরা ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ২০ থেকে ৫০ ফুট গভীর গর্ত করে কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ফসলি জমি চিরতরে মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে। সেগুলো হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। এভাবে গভীর গর্ত করায় পাশের কৃষি জমিও ভেঙে পড়ছে। ফলে কিছু কিছু জমির মালিক বেশি টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অনেকেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন।

গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় শত শত একর কৃষি জমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাটি ব্যবসায়ীদের থাবায থেকে বাদ যাচ্ছে না খাস জমি, খাল এবং নদ-নদীর তীরও। অপরিকল্পিতভাবে নদ-নদীর পাড় কেটেও বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যা জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়বে। এভাবে কৃষি জমি নষ্ট করায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

এদিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর বাজারের উত্তর পাশে তুরাগ নদের পাড়সহ মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় জেনেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও কোনো মাথা ব্যথা নেই। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে কৃষি জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদেক হাসান জাহিদ বলেন, এভাবে কৃষি জমির মাটি কাটায় শুধু এলাকার ক্ষতি হচ্ছে না, সারা দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। কারণ কৃষি জমি নষ্ট হওয়ায় দেশের ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষি পণ্যের দাম দিন দিন আরও বাড়বে। কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাইমাইল এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, গাসিকের ১২নং ওয়ার্ডের বাইমাইল এলাকায় কয়েক বিঘা জমিতে ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন তিনি। শিপন আহমেদ নামে এক মাটি ব্যবসায়ী কৃষি জমি থেকে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তার কৃষি জমি ভেঙে পড়ছে গভীর গর্তে। অপরিকল্পিতভাবে মাটিকাটা বন্ধ না করলে এক সময় আমাদের এলাকা থেকে কৃষি জমি হারিয়ে যাবে। রাতের অন্ধকারে ৩/৪টি ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে এভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ওই অসাধু ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম সাইফুর রহমান ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ মোরাদ আলীকে জানানো হয়েছিল।

আর মাটি ব্যবসায়ী শিপন আহমেদকে একাধিকবার কল দিলেও মাটি তিনি রিসিভ করেননি।

গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন,  যেহেতু তারা মাটি কেটে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন  করছে তাই বিষয়টি ইউএনও এবং এসিল্যান্ড দেখবেন।

এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমতির প্রয়োজন হয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩।
আরএস/এমএমজেড

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।