ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাষ্ট্রপতির মর্যাদা রাখতে অবসরের পর অন্য পদে যাওয়া উচিত নয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
রাষ্ট্রপতির মর্যাদা রাখতে অবসরের পর অন্য পদে যাওয়া উচিত নয়

ঢাকা: রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পর অন্য কোনো পদে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা সবার রাখা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে যতই লোভনীয় কিছু হোক না কেন সেখানে তার কোনো অবস্থাতেই যাওয়া ঠিক নয়। এটা করলে তা দেশের মানুষকে অপমান করা হবে, বেইজ্জতি করা হবে। দেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজে অবসরের পর আমি যাবো না।

রোববার (১২ মার্চ) রাতে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

আগামী ২৩ এপ্রিল আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পূর্ণ হবে। এজন্য রাষ্ট্রপতি গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মানে বঙ্গভবনে নৈশভোজের আয়োজন করেন। নৈশভোজে অবসরের পর রাষ্ট্রপতি তার নিকুঞ্জের বাড়িতে থাকবেন বলেও জানান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ আর মাত্র ৪২ দিন দায়িত্বে আছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এরকমও হয়েছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে কেউ মন্ত্রী হয়েছেন। আবার রাষ্ট্রপতির পর মন্ত্রী হয়েছেন। আবার দেখা গেল কেউ এমপি নির্বাচনে নমিনেশন না পেয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ায় গেলো। হায়াত থাকলে হয়তো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও দাঁড়িয়ে যেতো। এটা হওয়া উচিত নয়। আমি যে অবস্থাতে চলি না কেন এদেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন হোক এমন কোনো কাজে যাবো না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা সবার রাখা উচিত। এখান থেকে বেরিয়ে আর কিছু তার করা ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে যতই লোভনীয় কিছু হোক না কেন সেখানে তার কোনো অবস্থাতেও যাওয়া ঠিক নয়।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি প্রকাশিত তার আত্মজীবনী বইয়ের কিছু উদাহরণও বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে লেখা একটি অধ্যায়ের প্রসঙ্গও টানেন।  

বইয়ের ওই অংশটি পুরোপুরি ঠিক নয় বলে তার স্ত্রী অভিযোগ করেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বইয়ে আমার বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে যা লিখেছি তা সব ঠিক নয় বলে দাবি করেছে। আর বলেছেন আমি কিছু কিছু কথা লিখিনি। সমস্যা হচ্ছে যে, কমপ্লিটলি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলে এক রকম হয়। দেড় দুই বছর থেকে জানাশুনা থাকলে যা হয়। সেখানে তো সমস্যা একটু থাকবে। কারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি আমার দৃষ্টি ভঙ্গি। কথা এবং লেখায় একটু পার্থক্য তো থাকবেই। তবে আমি বলতে পারি আমি যা লিখেছি ঠিক লিখেছি। তার হয়তো পছন্দ না হতে পারে। সুতরাং সঠিক করে আর লেখার কিছু নেই। আমি যা লিখেছি সত্য লিখেছি। তার কাছে হয়তো আমার এই কথাগুলো ভালো লাগেনি।

অবসরকালে সাংবাদিকদের তার বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, মাঝে মধ্যে কেউ এলে আমার সময়টা ভালো কাটবে। আর এখনকার মতো তখন তো ওই আসা যাওয়ার বাধাটা থাকবে না। একেবারে ফ্রি হয়ে যাবে। সমস্যা থাকবে না। তবে এক সঙ্গে সবাই আইসেন না তাহলে সমস্যা হবে, ৪/৫ জন করে আইসেন।

বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতি করার সময় আমি বক্তৃতা করেছি ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আমার তো লিখিত বক্তৃতা দিতে হয়। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ১০ বছর হয়ে যাচ্ছে। ১০ বছর হতে আর মাত্র ৪২ দিন বাকি। ৪২ দিন পর আমার ১০ বছর পূর্ণ হবে। এর আগে প্রথমে আমি হই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেব মারা যাওয়ার পর আমি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ছিলাম ৪০ দিন।

তিনি বলেন, আমি ক্লাস নাইন থেকে রাজনীতি করি। ১৯৬১ সালে নাইন টেনে থাকাকালে ছাত্রলীগ করেছি। আমি মেট্রিক পাস করার পরই নেতা হয়ে গেছি। রাজনীতির শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আমার একটা পুরাতন সম্পর্ক। রাজনীতিতে আমি যতটুকু সুনাম অর্জন করেছি এতে সাংবাদিক ভাইদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পার্লামেন্টে থাকা আবস্থায় আপনাদের সঙ্গে যেভাবে কথাবার্তা বলতে পারতাম এ ১০ বছরে ওইভাবে কথাবার্তা হয়নি। তবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আমার আর এ সমস্যা থাকবে না।

নৈশভোজে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকরাও বক্তব্য রাখেন।
                                                        
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
এসকে/আরআইএস                               
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।