ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খড়ায় সাঁকো, বর্ষায় ডিঙি নৌকায় ভরসা

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
খড়ায় সাঁকো, বর্ষায় ডিঙি নৌকায় ভরসা

গাইবান্ধা: ষাটোর্ধ আব্দুল খালেক মিয়া। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেলেও চলাচলে আজও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি তার।

এ বয়সে বাইসাইকেলের পিছনে বস্তা বেঁধে পায়ে হেঁটে সাঁকো দিয়ে আখিরা নদী পার হতে হচ্ছে তাকে। একই অবস্থা এলাকার দশ গ্রামের হাজারো মানুষের। খড়ায় বাঁশের সাঁকো আর বর্ষায় ডিঙি নৌকায় চলাচল একমাত্র ভরসা তাদের।

সরেজমিনে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের করতোয়া পাড়া আমবাগান ঘাটের প্রতিদিনের চিত্র এমনই।

স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার ও চিকিৎসাসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে এই সাঁকোর ওপর দিয়েই সীমান্তবর্তী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় যাতায়াত করতে হয় ওইসব গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষদের।

কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের জাফর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, অত্র ইউনিয়নের জাফর, মুংলিশপুর, পালপাড়া, শীলপাড়া, গনকপাড়া, হাসানখোর, রামচন্দ্রপুর, জাইতরসহ ১০ গ্রামের মানুষ আমবাগান ঘাট দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে থাকেন।  

এর মধ্যে খড়ার বাঁশের সাঁকো এবং বর্ষায় ছোট্ট ডিঙি নৌকাই একমাত্র ভারসা তাদের। এলাকার স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা পাশের ঘোড়াঘাট উপজেলার শাহ ইসমাইল গাজী উচ্চ বিদ্যালয়, ঘোড়াঘাট মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ঘোড়াঘাট কেসি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঘোড়ঘাট রাজিয়া সুলতানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও নূরজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। চলাচলে দুর্ভোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। তবে খড়ার চেয়ে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

জাফর গ্রামের অন্য বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম (৫৭) জানান, বর্ষা এলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটা পথ নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। ডিঙি নৌকায় করে আমবাগান ঘাটের এপার থেকে ওপার পৌঁছাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এতে নৗকা ডুবির আশঙ্কার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটে।

মুংলিশপুর গ্রামের রিক্সা-ভ্যান চালক শাহীন মিয়া জানান, আমবাগান ঘাট থেকে পাশের ঘোড়াঘাট উপজেলা মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। অপর দিকের আমাদের নিজ উপজেলা পলাশবাড়ীর দুরত্ব প্রায় তের কিলোমিটার। সে কারণে হাটবাজারসহ যে কোনো প্রয়োজনে সাধারণ মানুষদের এ ঘাট দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হয়। ব্যবসায়িক-কৃষি পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মূল সড়ক থেকে ঘাট পর্যন্ত বালু পথ ঠেলে সাঁকোর দেখা মেলে। এরপর ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে হয়। অনেক সময় পণ্যসহ রিক্সা-ভ্যান ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অবু বক্কর সিদ্দিক জানান, দেশে পদ্ম সেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও আমবাগান ঘাটে ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি এলাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ব্রীজ হলে এলাকার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি ক্ষেত্রে গতি আসবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে সংসদ সদস্য অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি জানান, পলাশবাড়ীর আমবাগান ও ঋষিঘাটসহ সাদুল্লাপুর উপজেলার একাধিক স্থানে সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।