ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তীব্র গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিং, অতিষ্ঠ শরণখোলাবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৩
তীব্র গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিং, অতিষ্ঠ শরণখোলাবাসী

বাগেরহাট: কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার জনজীবন।  

সারাদিনে মাত্র কয়েকঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

বিশেষ করে তাফালবাড়ি, সোনাতলা, শরণখোলা, খুড়িয়াখালী, খোন্তাকাটা, বগী, চালিতাবুনিয়াসহ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে।  

বাকি সময়ে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা এলাকার বাসিন্দাদের। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলাবাসী জীবন।  

তবে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় এই লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, উপজেলা সদরে বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকলেও, অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

তাফালবাড়ি বাজারের তাহসান সাহাদ নামের এক যুবক বলেন, গরমে তো আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম। দিনে তো যেমন তেমন, রাতের বেশিরভাগ সময়ে তো বিদ্যুৎ থাকেই না। এখন এমন অবস্থা যে, বিদ্যুৎ থাকা না থাকা সমান কথা।

চালিতাবুনিয়া এলাকার ফয়সাল বয়াতি বলেন, রাতে অন্তত চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ যায়। বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১১টায় গেছে, আর বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকালে আসছে। কিন্তু শুনেছি, রায়েন্দা বাজারসহ অফিসিয়াল এলাকায় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই।

বগি এলাকার রাজ্জাক হোসেন দিপু বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। গরমে শিশু-বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় অনেকের।

সোনাতলা গ্রামের হেলাল বলেন, রাত ৩টার সময় বিদ্যুৎ গেছে, সকাল ৮টায়ও আসেনি। আর কখন আসবে, কে জানে! ইচ্ছেমত বিদ্যুৎ দেয়, আবার অফ করে। শুনেছি, উপজেলা সদরে নাকি বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে।

উপজেলার খারুইখালী গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম। নদী খালের পানিও গরম হয়ে উঠেছে। কোথাও একটু ঠাণ্ডা নেই। এর সঙ্গে দিনের বেশিরভাগ সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না। কী যে কষ্টকর একটা ব্যাপার, বুঝানো যাবে না।

বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় শুধু যে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, তা নয়। ব্যবসা বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা সদরের রায়েন্দা এলাকার বরফ কল ব্যবসায়ী মোস্তফা তালুকদার বলেন, একে তো গরমে শেষ হইলাম। এরপরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায়, ব্যবসার অবস্থাও খুব খারাপ। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয় না, আবার যা উৎপাদন করি তার মানও ভালো হয় না। এভাবে চললে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মো. আশিক মাহমুদ সুমন বলেন, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ১১ মেগাওর্য়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে আমরা ৪ থেকে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাই। যার কারণে কিছুটা লোডশেডিং হয়ে থাকে। এছাড়া রায়েন্দা বাজার ও সদর এলাকায় কম লোডশেডিং এবং প্রত্যন্ত এলাকায় বেশি লোডশেডিংয়ের যে অভিযোগটি উঠেছে, তা নিয়ে আমরা জরুরী সভা করেছি। এখন সব এলাকায় সমানভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

শুধু শরণখোলা নয়, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, বাগেরহাট সদরসহ জেলার অন্য ৮টি উপজেলা এবং বাগেরহাট শহরে তীব্র লোডশেডিং রয়েছে।

বাগেরহাট পৌরসভায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) তথ্য অনুযায়ী, শহরে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া যায় মাত্র ৪ মেগাওয়াট।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বাগেরহাটের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পিক আওয়ারে ৯৪ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ থাকছে ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। অপরদিকে অফপিকে ৮০ থেকে ৮২ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ আসছে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, একদিকে প্রচণ্ড তাবদাহ অপরদিকে রমজান মাস হওয়াতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। এছাড়া চাহিদার সংকুলান না হওয়ায়, জাতীয় গ্রিড থেকেও মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।  

তবে আবহাওয়া কিছুটা শীতল হলে চাহিদা কমবে এবং লোডশেডিংয়ের মাত্রাও কমে যাবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।