ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যুবলীগ- ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্রহাতে ৮ সন্ত্রাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
যুবলীগ- ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্রহাতে ৮ সন্ত্রাসী

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পোদ্দার বাজারে সাবেক যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এবং ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।  

তবে তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেনি।

 

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৩ টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা তিনজন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।  

এদিকে ঘটনাস্থলের পাশের একটি  সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে ৮ জন যুবককে হেঁটে চলে যেতে দেখা যায় ওই ফুটেজে। তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দেখা গেছে।  

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের সময় সিসি ক্যামেরায় ভিডিওটি ধারণ হয়।
 
স্থানীয়রা জানায়, এদিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পোদ্দার বাজার ব্রিজের পশ্চিম পাশে নাগেরহাট সড়কের মাদরাসাতুল আবরার নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নোমানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে নোমানের সঙ্গে থাকা রকিব ইমামকে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি করাত কলের পাশে গুলি করা হয়।  

তারা আরও জানায়, ঘটনার আগেই নোমান পোদ্দার বাজারে ছিলেন। একটি ফোন কল পেয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাবিককে নিয়ে পোদ্দার বাজারে থেকে উত্তরে নাগেরহাট সড়কে প্রবেশ করেন। মোটরসাইকেলটি রাকিব চালাচ্ছিলেন। তারা ওই সড়কের করাত কলের পাশে পৌঁছামাত্র অস্ত্রধারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এতে রাকিবের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলির আঘাত লাগে। নোমান আত্মরক্ষার্থে মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌঁড়ে উল্টো দিকে বাজারের উদ্দেশ্যে আসতে থাকেন। বিপরীত দিক থেকে কয়েকজন অস্ত্রধারী তাকে ধরে ফেলে। এসময় তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ সড়কের পাশে থাকা খাল পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় খুনিরা।  

পোদ্দার বাজারের লোকজন জানায়, ঘটনার সময় তারা তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ পেয়েছে। রাকিব ঘটনাস্থলে জীবিত ছিলেন। স্থানীয়রা তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে পোদ্দার বাজারের ভাই ভাই হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে রাত ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে প্রথমে রাকিবকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানোর পথে রাত পৌনে ১২ টার দিকে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে যুবলীগ নেতা নোমানকে পৃথক আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানায়।  

সাবেক যুবলীগ নেতা ও ছাত্রলীগ নেতা হত্যার প্রতিবাদে এদিন রাতেই শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।  

বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে  বিকেলে বশিকপুরে দুইজনের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।  

এদিন রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদিকে প্রধান আসামি করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নোমানের ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।  

স্থানীয় সূত্র জানায়, বশিকপুর ইউনিয়নের উষিয়াকান্দি গ্রামের বড় বাড়ির মৃত আবুল কাশেমের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান। তার বড়ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, মেঝোভাই মিজানুর রহমান মাকছুদ। তিনি ইতালি প্রবাসী। নোমান ২০১৩ সালে বশিকপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্প্রতি নোমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন বলে জানা গেছে।  

নোমানের বোনের মেয়ে উর্মি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ এপ্রিল নোমান ওমরাহ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে যান। তিনি দেশে ফেরেন ২০ এপ্রিল। ঢাকার বাসায় থেকে ২১ এপ্রিল (শুক্রবার) ঈদের গ্রামের বাড়িতে আসেন নোমান। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ঘটনার দিন দুপুরে নোমান বাসা থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরে যাননি। রাতে তিনি নিহত হন।  

নোমান ও রাকিব হত্যার পেছনে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদিকে দায়ী করে নোমানের বোনজামাই মো. শামছু বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাশেম জেহাদি নোমানকে টার্গেট করেছে। তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। কিন্তু নোমান মনে করেনি- তাকে হত্যা করা হবে। ঘটনার আগে তারেক আজিজ নামে এক ছেলে নোমানকে ফোন করে জরুরি কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। রাকিবসহ মোটরসাইকেলযোগে পোদ্দার বাজারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুইজনকে গুলি করা হয়।  

তিনি অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি আবুল কাশেম জেহাদির সহযোগী শরীফ, নিশান ও মোটা বাবলু ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। এরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। হত্যাসহ যে কোন অপরাধমূলক কাজ করে তারা। কাশেম জেহাদিই তাদেরকে দিয়ে আমার নোমানকে হত্যা করিয়েছে। আমরা চাই পুলিশ প্রশাসন নিরাপদ লোকজনকে হয়রানি না করে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনবে।  

আরও পড়ুন >> যুবলীগ নেতা হত্যা: আ.লীগ নেতা জেহাদীকে আসামি করে  মামলা

                        আমি চেয়ারম্যানি চাই না, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন 

                       যুবলীগ নেতা নোমানের মৃত্যুর পর গুলিবিদ্ধ রাকিবও মারা গেছেন

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।