ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেট্রোরেলে এক ঘণ্টা পর টিকিট পাঞ্চ, যাত্রী গুনলেন জরিমানা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
মেট্রোরেলে এক ঘণ্টা পর টিকিট পাঞ্চ, যাত্রী গুনলেন জরিমানা

ঢাকা: স্বপ্নের মেট্রোরেল ভ্রমণ করতে কে না চায়! ছুটির দিনে একটু সময় নিয়ে অনেকেই ভ্রমণ করছেন মেট্রোরেল। উত্তরা দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও এবং আগারগাঁও-উত্তরা দিয়াবাড়ি চলাচলে মেট্রোরেলে সময় লাগে মাত্র ১৬ মিনিট।

যদিও সড়ক পথে অন্য কোনো বাহনে ঘণ্টার অধিক সময় কেটে যায়।

রাজধানীতে মেট্রো সার্ভিস চালুর পর এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। আর এ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভ্রমণের স্বাদ পেতে প্রতিনিয়ত সবাই ছুটে আসছেন মেট্রোরেল স্টেশনে।

টিকেট কেটে কার্ড পাঞ্চ করেই উঠছেন যাত্রীরা মেট্রোরেলে৷ এক স্টেশন থেকে ভ্রমণ করে অন্য স্টেশনে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ভ্রমণের এ মুহূর্ত বেশিরভাগ যাত্রীই নিজের মোবাইল ফোনে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন। কেউ কেউ স্টেশনে প্রবেশের পর থেকে শুরু করে মেট্রোরেলে ভ্রমণ শেষ করা পর্যন্ত সময় স্টেশনের ভেতরে বাইরে ছবি তুলছেন। আর এ ছবি তোলায় অনেক যাত্রীর কেটে যাচ্ছে ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে দেরি করে আসা যাত্রীদের টিকিট এক ঘণ্টার বেশি সময় হলেই পাঞ্চ মেশিন নিচ্ছে না ওই টিকিট, পরিশেষে জরিমানা গুনছেন যাত্রীরা।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) এমনই এক যাত্রী জরিমানা গুনলেন মেট্রোরেলের উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে।

ওই যাত্রী (নারী) আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেল ভ্রমণ করে উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে এসেছেন৷ কিন্তু তিনি মেট্রোরেল থেকে নেমে তার কার্ডটি পাঞ্চ করে আর বের হননি। শেষে বের হওয়ার সময় তার ক্রয় করা কার্ডটি (টিকিট) মেশিনে দিলেও আর নিচ্ছিল না৷ পরে ৬০ টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি গেট দিয়ে বের হন।

নাম প্রকাশ না করে ভুক্তভোগী ও নারী যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন,  আগারগাঁও থেকে টিকেট কেটেছি৷ সেখানে প্রবেশের সময় মেশিনে টিকিট পাঞ্চ করে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করলাম। কিন্তু উত্তরা দিয়াবাড়ি এসে নেমেছি। এখানে বের হতে গিয়ে মেশিন আর আমার টিকিট নিচ্ছে না। পাশের কাউন্টারে ৬০ টাকা জরিমানা গুনে বের হতে হয়েছে।

এদিকে, মেট্রো স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত সদস্য তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এ স্টেশনে এসে অনেক সময় পর বের হলেন কেন? উত্তরে ওই যাত্রী বলেন, মেট্রোরেল থেকে নেমে আমরা ছবি তুলেছিলাম। সেখানে সময় লেগে গেছে।  

এরপরই কাউন্টারের সদস্য জানালেন, মেট্রো যাত্রীদের প্রতিটি টিকিটের সময় দেওয়া আছে ১ ঘণ্টা, এর মধ্যে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পাঞ্চ করতে হবে। ১ ঘণ্টার (৬০ মিনিট) এর ১ সেকেন্ট বেশি হলে ওই টিকেট মেশিন আর নেবে না৷ এরজন্য আপনাকে বের হতে হলে ৬০ টাকা দিয়ে টিকেট আরও একটি টিকেট নিয়ে বের হতে হবে।

পরে ওই যাত্রী ৬০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে পরে বের হন।

এরপর তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ভ্রমণের পর স্টেশনে এসে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে ছিলাম। যদি বিষয়টি জানা থাকতো তবে সময় শেষ হবার আগেই বের হয়ে যেতাম৷

অপরদিকে, আগারগাঁও থেকে এক যাত্রী এসেছেন তার কার্ড মেশিন নিচ্ছে না৷ তিনি বের হতে না পেরে বিপদে পরে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছে বিষয়টি জানান।

সেখানে টিকেট চেক করে দেখা গেল তার টিকিটটি আগারগাঁও থেকে উক্তরা ১৫ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত। কিন্তু তিনি নেমেছেন দিয়াবাড়ি স্টেশনে। টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা।  

এরপর কাউন্টারের দায়িত্বরত সদস তাকে জানালেন, সমস্যা নেই ১০ টাকা ভাড়া যোগ করলেই আপনি বের হতে পারবেন। কারণ উত্তরা ১৫ নস্বর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো ভাড়া ৫০ টাকা আর দিয়াবাড়ি স্টেশনে ৬০ টাকা। অতিরিক্ত ভ্রমণের ভাড়া পরিশোধ করলেই সমাধান।

ভুক্তভোগী যাত্রী আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগারগাঁওয়ে টিকিট কাটার সময় বলেছিলাম দিয়াবাড়ি যাব না ১৫ নম্বর যাবো। তাই এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আসলে ভুলটা আমারই হয়েছে। তবে মেট্রো সার্ভিস ভালো লেগেছে।

এদিকে মেট্রোরেল স্টেশনে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা জানান, আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত মেট্রোরেলে সময় লাগে মাত্র ১৬ মিনিট। কিন্তু টিকিটের সময় দেওয়া থাকে ১ ঘণ্টা। এদিকে যাত্রীরা টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করে ছবি তুলেই সময় ব্যয় করে থাকে। টিকিট কাটার পর ১ ঘণ্টা সময়ের ১ সেকেন্ট পরও যদি মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করা হয় তবে সে কার্ড মেশিন নেবে না। এভাবেই মেশিনে অটোমেশন স্যাটআপ করা রয়েছে। আমাদের হাতে কিছুই নেই।

এ বিষয়ে উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশন কন্ট্রোলার মো. আসলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি যাত্রীর টিকিটে সময় সীমা ১ ঘণ্টা, এরমধ্যে তাকে মেশিনে পাঞ্চ করে বের হতে হবে। নয়তো মেশিন ওই টিকিট নেবে না। মেট্রোরেলে অতিরিক্ত ভ্রমণ করলেও কোনো জরিমানা নেই। শুধু যাত্রী বের হবার সময় অতিরিক্ত ভ্রমণের চার্জ পরিশোধ করলেই বিষয়টি সমাধান।

তিনি বলেন, আমরা স্টেশনের প্রতিটি স্থানে বোর্ড লাগিয়ে মেট্রোরেলের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও স্টেশনের মাইকে বারবার ঘোষণা করে বলা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা সেই নির্দেশনাগুলো পড়ে না, শোনে না বা মানে না।  

তিনি বলেন, স্টেশনের সিস্টেমেই এ নির্দেশনা রয়েছে। তাই যাত্রীদের মধ্যে যারা মেট্রোরেল থেকে নেমে নির্ধারিত সময় কার্ড পাঞ্চ করছেন তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বের হচ্ছেন না তাদের টিকিটই নিচ্ছে না মেট্রো সিস্টেম৷ 

তাই স্টেশনের প্রবেশের সময় মেট্রোরেলে চলাচলে সব নির্দেশনাগুলো ভালো করে পড়ে দেখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।  

মেট্রোরেল স্টেশনে লিফট সুবিধা মূলত বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ব্যক্তি বা যারা ভারী ব্যাগ বহন করছেন তাদের জন্য। কিন্তু স্টেশনের লিফটে সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুস্থ সবল নারী-পুরুষরা লিফটের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে না গিয়ে লিফট ব্যবহার করছেন৷

এদিকে, যাত্রীরা মেট্রোরেলে স্টেশনের বাইরে যত্রতত্র ময়লা ফেলছেন। ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে ডাস্টবিন থাকলেও সেটির ব্যবহার সবাই করছেন না। অনেকেই চিপস, আইসক্রিমের প্যাকেট, টিস্যু পেপার, আইসক্রিমের প্লাস্টিক কাপ, পলিথিন ইত্যাদি আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে মাইকে বারবার বলা হলেও যাত্রীরা এবিষয়ে অনেকটাই উদাসীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।