ফেনী: বর্ষায় উজানের পানিতে বন্যা আর ধানের মৌসুমে ফেটে চৌচির- এমন করুণ হাল ফেনী উত্তরের তিন নদী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়ার। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানি শুকিয়ে নদী যেন কাঠ।
তিন উপজেলার কৃষি ও জীব বৈচিত্র এবং জনজীবন এ তিন নদীর ওপর নির্ভর থাকলেও নদীতে পানি শূন্যতার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষিজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের কপালে।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে পানি সংকটের কারণে পরশুরাম কোলাপাড়া, বাঁশপদুয়া, খোন্দকিয়া, বাউরখুমা, বাউরপাথর, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর, দক্ষিণ টেটেশ্বর, চিথলিয়া ইউনিয়নের কিসমত ঘনিয়া মোড়া, চিথলিয়া, রাজষপুর, শালধর, ধনিকুন্ডাসহ ১০টি গ্রাম ও ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর, নিলক্ষী, গাবতলা, বদরপুরসহ ১০টি গ্রামে বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ রানা বলেন, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আর ফুলগাজীতে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু নদীর পানি সংকটে অন্তত ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষি অফিস বলছে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা গেলে এ দুরাবস্থার অবসান হবে।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করার সময় স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে না। এ সমন্বয়হীনতার কারণে বর্ষায় পানিতে ডুবতে হয়। আর গ্রীষ্মে নদী ফেটে চৌচির হয়ে যায়।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম বলেন, এ সময় এ নদী এত বড় ছিল সাঁতরে পার হওয়া যেতো না। এখন নদী অনেক ছোট হয়ে গেছে। ধানের মৌসুমে নদী শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে যায়। বৃষ্টির মৌসুমে বন্যার কারণে মানুষের ফসলিহানি হয়। ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আলীম বলেন, নদীর এ দুরবস্থার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ী। তারা প্রকল্প হাতে নেয় কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে না। সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটা হচ্ছে।
বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ ও সমন্বয়হীনতার কথা উঠে আসলেও ভিন্ন কথা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদী শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অনাবৃষ্টিকেই তারা দুষছেন৷
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, এমনটা কখনও হয়নি নদী একেবারেই শুকিয়ে গেছে। এটি এবারই হয়েছে, এটি অনাবৃষ্টির কারণেই হয়েছে। নদীর নাব্যর কোনো বিষয় নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য মুহুরী সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে।
প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা বলছেন মুহুরী সেচ প্রকল্পসহ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ ব্যবস্থাপনা কোনো কাজেই আসছে না। পানির অভাবে ধানি জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে।
ফুলগাজীর কৃষক আবুল কালাম বলেন, বৃষ্টির দিনে বানের পানিতে নদী ফসল ঘর বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও ধানের মৌসুমে শুকিয়ে যায়। কোনো কাজেই লাগানো যায় না নদীর পানি। আসগর হোসেন নামের আরেক চাষি জানান, নামে অনেক প্রকল্প ও সরকারি কর্মকাণ্ড আছে। কাজে কিছুই নেই।
কৃষক ও স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন নদী সংস্কারের মাধ্যমে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা গেলেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা গেলেই ঘুচবে মানুষের দুঃখ। তা নাহলে গলার কাঁটায় পরিণত হবে নদী তিনটি৷
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
এসএইচডি/জেএইচ