ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও, বাড়তি রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও, বাড়তি রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার প্রতীকী ছবি

ঢাকা: সিগারেটের প্যাকেট মূল্যের থেকে বিক্রয় মূল্যের পার্থক্যের কারণে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।  

উন্নয়ন সমন্বয় কর্তৃক ক্ষুদ্র পরিসরে পরিচালিত বাজার গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে সংস্থাটির আয়োজনে ‘রাজস্ব আয়: সিগারেটের ঘোষিত মূল্য ও বাজার মূল্যের পার্থক্যের প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী চারটি স্তরের সিগারেট বিক্রি হয়ে থাকে। তার প্রতিটির জন্য একটি ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা আছে। ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী, প্রতি শলাকা বা প্রতি প্যাকেট সিগারেট যত দামে বিক্রি হওয়ার কথা, বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দামে। যদিও সিগারেট কোম্পানিগুলো ঘোষিত মূল্যের ওপরেই সরকারকে কর পরিশোধ করছে। যার ফলে সিগারেট সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও, সরকার এই বাড়তি ব্যয়ের ওপর কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।

ভার্চুয়াল আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, একাত্তর টিভির চিফ বিজনেস রিপোর্টার সুশান্ত কে. সিনহা।

এসময় বাজার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের লিড ইকোনোমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা। তিনি বলেন, সিগারেটের প্যাকেটে উল্লেখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়াতে সরকার প্রায় ৫,৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা মূলত ঢাকা শহর, রাজশাহী শহর এবং সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এলাকার সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, নিম্নস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ২০ শলাকার প্যাকেট নির্ধারিত মূল্যের থেকে গড়ে প্রায় ১১ টাকা, মধ্যম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা এবং উচ্চ স্তরের সিগারেট প্যাকেটের ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে ১০ টাকা বেশি দাম নেওয়া হয়ে থাকে।  

নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে বিক্রিত মূল্যের সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে। যেখানে প্যাকেট প্রতি বিক্রিত মূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ২৪ টাকা বেশি। দামের এমন পার্থক্যের কারণে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এসময় ক্ষুদ্র পরিসরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে কর নীতির জন্য কিছু বিষয় সুপারিশ পেশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, 

বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত খুচরা মূল্য চলমান বাজার মূল্য থেকে বেশি নির্ধারণ করা, 
নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটে ভিন্ন ভিন্ন দামের ব্রান্ডগুলো একই মূল্যে নিয়ে আসা, এবং 
সিগারেটের ক্ষেত্রে চার-স্তরের পরিবর্তে দুই-স্তরের কর কাঠামো করা।  

এর ফলে জনগণকে ধুমপানে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারেরও তামাক পণ্য থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা সম্ভব।

সভার প্যানেলিস্ট ড. গোলাম মোয়াজ্জেম উন্নয়ন সমন্বয় এবং অন্যান্য তামাকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের প্রশংসা করে বলেন, তামাকপণ্যে করারোপের পাশাপাশি এই পণ্যে ভোগ কমাতে উৎপাদন এবং বিপণনের পর্যায়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী তার বক্তব্যে বলেন, এটি একটি সম্মিলিত যুদ্ধ। তাই করের মতো একটি মাত্র ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে তামাকজাতীয় পণ্যের বিক্রয় বা সেবন বন্ধ হবে না। সিগারেট বা যে কোনো তামাকজাত পণ্য নেশাজাতীয় দ্রব্য, যার প্রাইস ইলাস্টিসিটি কম, যে কারণে এটির দাম বাড়াতে হলে অনেক বেশি বাড়াতে হবে। তামাকজাতীয় পণ্যের দাম যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ালে সেটি স্বল্পমেয়াদে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করবে না।

উন্মুক্ত আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ, ঢাকা আহসানিয়া মিশন এবং ওর্য়াক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করে। এছাড়াও সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
আরকেআর/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।