ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাবি ছাত্রের সুইসাইড নোট:

‘যে হারায় সে-ই হারানোর যন্ত্রণাটা বোঝে, আর কেউ না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
‘যে হারায় সে-ই হারানোর যন্ত্রণাটা বোঝে, আর কেউ না’

রাজশাহী: ‘যে হারায় সে-ই হারানোর যন্ত্রণাটা বোঝে আর কেউ না’ - নিজের সুইসাইডাল নোটে এ কথাটি লিখেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্র তানভীর ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকার একটি ছাত্রাবাসে তার ঝুলন্ত মরদেহ পেয়েছে পুলিশ।

নিহতের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী সদর থানার কাঞ্চনহাট গ্রামে। বাবার নাম আবু বকর সিদ্দিক। পুলিশ জানিয়েছে, বিনোদপুর এলাকার স্টুডেন্ট প্যালেস নামে ছাত্রাবাস থেকে খবর পেয়ে সদস্যরা গিয়ে তানভীরের মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় তার হাত থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করে তারা।

সুইসাইড নোটে লেখা- ‘প্রিয় বাবা মা। আপনাদের অনেক ভালোবাসি। জানি না কোথায় কমতি ছিল। আম্মুর জন্য বেশি খারাপ লাগতেছে। আমাদের ফ্যামিলিটায় আম্মুর অবদানটাই আমি বেশি মনে করি। কথাটা বলার অনেক কারণ যেটা আব্বু হয়ত জানে। তোমাদের জন্য কিছু তো করতেই পারলাম না উল্টো ফ্যামিলিটাই শেষ করলাম। ছোট বোনটার কথা আর বললাম না, কান্না পাচ্ছে। দিনের পর দিন আপনাদের ঠকাই গেছি। এসব আপনারা জানতে পারলে হয়ত ভিতর থেকেই মরে যেতেন। সব সময় ভয়ে ভয়েই থাকতাম। গলা গিয়ে খাবার নামতো না।

কথা বেশি বাড়াবো না আর। যে হারায় সে-ই হারানোর যন্ত্রণাটা বোঝে আর কেউ না। এসব কিছু থেকে বাঁচার জন্যই সিদ্ধান্ত, আর কোনো উপায় ছিল না আমার কাছে। শেষমেশ একাকীত্বই আমাকে গিলে খেল। মনের শক্তি ফুরিয়ে এলে দেহের শক্তি যতই থাক সম্ভব না বাঁচা। যদিও ক্ষমার যোগ্য না আমি, পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাদের অযোগ্য সন্তান। ’

ছাত্রাবাসের লোকজন জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কক্ষের দরজা বন্ধ করে অবস্থান করছিলেন তানভীর। রাতে বাড়ি থেকে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বাবা মেস মালিককে খোঁজ নিতে বলেন। তখন দরজায় কড়া নেড়ে কোনো সাড়া পাননি মেস মালিক। পরে জানালা দিয়ে ঘরে উঁকি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তার গলা ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ছিল।

শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা আমাকে রাতেই এই ঘটনা জানিয়েছে। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে এখনও তার (তানভীর) মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি।

মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম জানান, তানভীরের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। সুইসাইড নোট নিয়ে ঘটনা তদন্তের চেষ্টা চলছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করার পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।