ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গফরগাঁও ‘ঘুষ’ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলছেন, ষড়যন্ত্র 

মো, আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
গফরগাঁও ‘ঘুষ’ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলছেন, ষড়যন্ত্র 

ময়মনসিংহ: সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ১৩ নম্বর দত্তের বাজার ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ও সচেতন মহলে।

ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন হলেও এ ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।  

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মিজানুর রহমান এক জমির মালিককে বলছেন, পাঁচ হাজার টাকায় জমির খারিজ হবে না। এভাবে কাজ করলে আমাকে ভিক্ষা করে খেতে হবে। এরপর ওই টাকা জমির মালিককে ফেরত দিয়ে দিতে দেখা যায় তাকে।

তবে এ ঘটনাটিকে ভূমি সংশ্লিষ্ট দালাল সিন্ডিকেটের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন এ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
 
এর আগে গত বছরের মার্চে বিতর্কিত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাকে বদলি করা হয় গফরগাঁও উপজেলায়।  

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে মিজানুর রহমানকে বদলি করে দত্তেরবাজার ইউনিয়নে আনা হয়। এখানে যোগদান করেও তিনি জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের অনিয়মে। এতে ক্ষুব্ধ নিজাম উদ্দিন, জুয়েল আকন্দসহ অনেকেই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে গত বছরের ২ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিলে ঘটনাটি তদন্ত করেন সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার জান্নাতুল মাওয়া।    

তদন্ত কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া বাংলানিউজকে জানান, অনেক আগেই এ তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।      

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, দুই দফা অভিযোগের পরও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সুপারিশকৃত অপর একটি অভিযোগ চলতি বছরের ১১ মে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দায়ের করেন এলাকাবাসী। এরপর গত ২২ মে এ অভিযোগটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ অবস্থা তারা বলতে পারবেন।    

কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানান অভিযোগকারী মঈন উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাস, সেলিমসহ আরও অনেকে।
   
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি এবং রাজস্ব শাখার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দ্রুত তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে আগের তদন্ত প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আমি সঠিক কাগজ ছাড়া ভূমি নামজারির কোনো কাজ করি না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি দালাল চক্র আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব অভিযোগ দায়ের করেছে। কারণ আমি দত্তের বাজার ইউনিয়নে যোগদানের আগে এ ভূমি অফিসটি দালাল বেষ্টিত ছিল। আমি তাদের সরিয়ে দেওয়ায় তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ।  

তিনি আরও বলেন, আমি এ অফিসে যোগদান করার পর গত এক বছরে জমির খাজনা আদায় বাবদ সাড়ে ১৫ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছি। এর আগের বছর এ অফিসের রাজস্ব ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার টাকা।  

এসময় ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিডিওটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমি ওই টাকা ফেরত দিয়েছি, নেইনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।