ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ শোকে মাতম তাজিয়া মিছিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৩
‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ শোকে মাতম তাজিয়া মিছিল

ঢাকা: খালি পা, কোনো স্যান্ডেল নেই। গায়ে কালো রঙের পাঞ্জাবি।

বুকের মাঝখানে ডান হাত রাখা। মাথানিচু করে কেবলই বলছেন, ‘ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন। ’

পুরান ঢাকার ধর্মপ্রাণ হাজারো মুসলমান আজ সূর্য ওঠার আগে হোসেনি দালানে হাজির হন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী নারী-পুরুষ আসেন সেখানে। তাদের পরনে কালো কাপড়, মাথায় বাঁধা কালো পতাকা। আর তরুণদের হাতে কালো পতাকা।

আজ ১০ মহররম। সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ একটি দিন। দিনটি পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।

শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়। ১০ মহররমে অনেক ফজিলতময় ঘটনা ঘটেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন। আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আজ শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হয়।

পুরান ঢাকার চকবাজারের বাসিন্দা আরিফ হোসেন (৪০)। তিনি যখন থেকে বুঝতে শিখেছেন, তখন থেকেই হোসেনি দালান থেকে আশুরার শোক মিছিলে অংশ নিয়ে আসছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছোট্ট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভোরে তিনি হাজির হন হোসেনি দালানে।

আরিফ হোসেন বলেন,‘আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নিহত হন। আজ আমাদের শোকের দিন, দুঃখের দিন, মাতমের দিন। ’

সকাল ১০টায় হোসেনি দালান থেকে শুরু হয় আশুরার শোক মিছিল। মিছিলে সামনে-পেছনে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি। আর শোক মিছিলে অংশ নেওয়া সব নারী-পুরুষের অনুভূতিই শোকের। সবাই শোকে আচ্ছন্ন।

আজকের মিছিলে যেসব তরুণ অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রায় সবার হাতেই কালো কাপড় দিয়ে মোড়া বাঁশের লাঠি। লাঠির অগ্রভাগে তরবারিসহ নানা প্রতীক। মিছিলে অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে আনুষ্ঠানিকতার পর্ব শুরু হয় তাজিয়া মিছিলের। এরপর তা দুপুর আড়াইটার দিকে ঝিগাতলা মোড়ের ধানমন্ডি লেকে অবস্থিত প্রতীকী কারবালা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

হোসেনি দালান থেকে শুরু শুরু হওয়া এই শোক মিছিল দেখতে রাস্তার দুই ধারে জড়ো হয় বহু মানুষ। এ সময় মিছিলের শোক তাদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।