ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত রেজাউল করিম (২১) রাজনীতি তো দূরের কথা সমর্থনও করতেন না। এ দাবি করেছে তার পরিবার।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রেজাউলের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে এটি সম্পন্ন করেন ঢমেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে।
রেজাউলের পরিবারের দাবি, যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় দাওরা হাদিস বিভাগে পড়তেন তিনি। ঘটনাচক্রে দুই গ্রুপের মাঝে পড়ে রেজাউল নিহত হন। তিনি কোনো দলের সদস্য ছিলেন না। রাজনীতিই সমর্থন করতেন না রেজাউল।
শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা পশ্চিম পাড়া গ্রামে রেজাউলের বাড়ি। তার বাবার নাম আব্দুল সাত্তার; তিনি কৃষক, মা রেনু বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে রেজাউল চতুর্থ।
নিহতের বেয়াই মো. রাসেল মিয়া জানান, গত বুধবার গ্রাম থেকে রাজধানীর খিলগাঁও গোড়ানে তার বাসায় আসেন রেজাউল। সেখানে তিনি অসুস্থতা অনুভব করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জানা যায় তিনি ডেঙ্গু পজিটিভ। চিকিৎসকরা তাকে বাসায় অবস্থান করে প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে পরামর্শ দেন।
গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে রেজাউল বাসা থেকে বের হন। স্বজনদের জানান মাদরাসায় গিয়ে ছুটি নিয়ে ঘরে ফিরবেন। এরপর থেকে রাসেল মিয়াদের সঙ্গে রেজাউলের কোনো যোগাযোগ হয়নি। শনিবার (২৯ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তিনি জানতে পারেন গুলিস্তানে এক যুবক মারা গেছেন। পরবর্তীতে ঢামেকে গিয়ে তিনি রেজাউলের মরদেহ শনাক্ত করেন।
রেজাউলের খালাতো ভাই আব্দুল আলীম জানান, যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় গত দুই বছর ধরে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। রেজাউল কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন করতেন না। শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার কথা ছিল তার। আলীম ও তার অন্যান্য স্বজনরা ধারণা করছেন, জুমার নামাজের পর সমাবেশ এলাকায় তিনি ঘোরাঘুরি করছিলেন। আওয়ামী লীগের সমাবেশ শেষে দলের দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ বাধলে এর মাঝে পড়ে নিহত হন রেজাউল।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার নিহতের বড় বোন ফারহানা আফরিন সুমি বাদি হয়ে এটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, অসুস্থতার কারণে যাত্রাবাড়ীর মাদরাসা থেকে ছুটি নিয়ে খিলগাঁওয়ে বেয়াইর বাসায় যাওয়ার পথে গুলিস্তানে নামেন রেজাউল। সেখানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মাঝে পড়লে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ঘাতকরা।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দীন মিয়া জানিয়েছেন, ঢামেকে রেজাউলের মরদেহ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বড় বোন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানিয়েছিলেন, রেজাউলেল বাঁ পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তিনি যেটুকু জেনেছেন, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় যুবক রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
এজেডএস/এমজে