ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মাদক বিক্রি ছেড়েও সমাজে ফিরতে পারছেন না দম্পতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
মাদক বিক্রি ছেড়েও সমাজে ফিরতে পারছেন না দম্পতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দীর্ঘ এক যুগ ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে মাদক বিক্রি করতেন মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল ও এমালী বেগম দম্পতি। বর্তমানে টুটুলের বিরুদ্ধে ৬টি মাদক মামলা আদালতে চলমান।

 

তবে বুধবার (২ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশ্বরোড মোড়ের একটি অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন স্বামী-স্ত্রী।

মজিবুর রহমান টুটুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোয়াটুলি গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মাদক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল বলেন, আমি গত ১২ বছর ধরে গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। দুই মাস আগে আমার স্বাভাবিক জ্ঞান ফিরেছে। আমি বুঝতে পেরেছি আমি ভুল পথে হাঁটছিলাম। তাই আমি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এলাকাবাসী আমাকে মেনে নিচ্ছে না। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তাই বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। আমি সবার মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।  

মুজিবুর রহমানের স্ত্রী এমালি বেগম বলেন, আমার স্বামী দুই মাস আগেই মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু মানুষ আমাদের এখনো খারাপ চোখে দেখছে। এতে আমাদের বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমি ও আমার স্বামী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। আমার স্বামীর নামে এখনও ৬টি মাদক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোতে তিনি জামিনে আছেন।  

এদিকে স্থানীয় সূত্র মতে সম্প্রতি মাদক ও টুটুলের বিরুদ্ধে চারটি গ্রামের তিন শতাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মাদকবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সমাবেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয় মাদক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল ও তার স্ত্রী এমালী বেগমের নাম। পরে ৪ গ্রাম থেকে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে আইনশৃঙ্থলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকলেও সমাবেশের পর সক্রিয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে চাপে পড়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী টুটুল ও তার স্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, মাদক ব্যবসায়ী স্বামী-স্ত্রী। এটিকে, মাদক ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার নতুন কৌশল বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এসব এলাকায় বহিরাগত মাদকসেবীদের আনাগোনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এমনকি মাদকের কারণে গ্রামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম বেড়ে গেছে।

সম্মেলনে উপস্থিত মহারাজপুরের এক ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, সংবাদ সম্মেলনের সময় টুটুলকে মাদকাসক্ত মনে হয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ ইসলাম রাজন বলেন, টুটুল ইউনিয়নের একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের ব্যাপক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপের কারণেই হয়ত এমনটা করতে পারে। কৌশল হিসেবে অথবা সত্যিকার মাদক ছাড়তে চান কি না তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হামিদুল হক বলেন, এর আগে কখনও কাউকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মাদক ব্যবসা ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে টুটুল যদি মাদক ব্যবসা ছাড়তে চায়, তা ভালো উদ্যোগ। তবে তার নামে চলমান ৬টি মাদক মামলায় কোনো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। আগের অপরাধের জন্য যথাযথ শাস্তি পেতে হবে তাকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবুল কালাম সাহিদ বলেন, কেউ মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাইলে এমন উদ্যোগকে আমরা সাদরে গ্রহণ করব।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।