ঢাকা, বুধবার, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১১ জুন ২০২৫, ১৪ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন লালবাগ কেল্লা

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩২, জুন ১০, ২০২৫
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন লালবাগ কেল্লা

ঢাকা: ঈদুল আজহায় এবার লম্বা ছুটি। ছুটিতে যারা ঢাকায় আছেন তারা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাচ্ছেন।

এই ঈদে যারা ঢাকায় অবস্থান করছেন তাদের জন্য শহরের মধ্যে একটু আনন্দময় সময় কাটানোর স্থান হতে পারে লালবাগ কেল্লা। ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা একটি। পরিবারসহ একটু নির্মল বায়ুতে সময় কাটানোর দুর্দান্ত একটি স্পট হতে পারে এটি। শিশুদের জন্য আনন্দের পাশাপাশি স্থানটি হতে পারে শিক্ষণীয় অনেক কিছু।

কেন বিখ্যাত লালবাগ কেল্লা: মুঘল আমলের যেসব স্থানসমূহ এখনও ঐতিহাসিক চিহ্ন বয়ে চলছে তার মধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম। ঐতিহাসিকভাবে স্থানটি ‘কেল্লা আওরঙ্গবাদ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই কেল্লা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নির্মাণ শুরুর এক বছরের মাথায় সুবেদার আজম শাহকে মারাঠা বিদ্রোহ দমনে দিল্লি ডেকে পাঠান সম্রাট আওরঙ্গজেব। তাই তিনি এই দুর্গের কাজ শেষ করতে পারেননি।

১৬৮০ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ বাংলার সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে লালবাগ কেল্লার নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর মেয়ে ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। মেয়ের মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন। তাই ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। পরী বিবির মৃত্যুর পর তাকে লালবাগ দুর্গের মধ্যেই সমাহিত করা হয়। এরপর থেকে একে পরী বিবির সমাধি নামে আখ্যায়িত করা হয়। পরী বিবির সমাধির যে গম্বুজটি আছে তা একসময় স্বর্ণখোচিত ছিল। এখন আর স্বর্ণ নেই। তামার পাত দিয়ে পুরো গম্বুজটিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেখা যাবে যেসব স্থাপনা: লালবাগ কেল্লা মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন, যাতে একইসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর রংবেরঙের টালি। বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন পদার্থের সংমিশ্রণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।  

লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজা রয়েছে। যার মধ্যে একটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা পরী বিবির সমাধি। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো হলো- কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরী বিবির সমাধি (যা পরী বিবির মাজার নামে পরিচিত) এবং উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ।

সুবেদার আজম শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার আগে এই শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। মসজিদটিতে জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। ঢাকায় এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে। এ ছাড়া লালবাগ কেল্লায় বেশ কয়েকটি ফোয়ারার দেখা মিলবে। কেল্লাতে সুরঙ্গ পথও আছে। শ্রুতি আছে, আগে এসব সুরঙ্গ পথে যাওয়া যেত। তবে এখন যাওয়া যায় না। লালবাগ কেল্লায় সর্বসাধারণের দেখার জন্যে একটি জাদুঘর রয়েছে। জাদুঘরটি আগে নবাব শায়েস্তা খাঁ-এর বাসভবন ছিল। এখান থেকেই তিনি শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরে মুঘল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবি, শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র, তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রা ইত্যাদি রয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবে দর্শনার্থীদের বিশেষ করে জ্ঞানপিপাসুদের মুগ্ধ করবে।

যেভাবে যাবেন জাদুঘরে: লালবাগ কেল্লা একটু ভেতর দিকে হওয়ায় পাবলিক বাস সাধারণত পাওয়া যায় না। তবে ঢাকার গুলিস্তান, শাহবাগ বা কার্জন হলের সামনে থেকে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে লালবাগ যাওয়া যায়।

টিকিট সংগ্রহ করবেন কীভাবে: লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার। দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি টিকিট মূল্য ৩০ টাকা। তবে লালবাগ জাদুঘরের কাস্টডিয়ান অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা টিকিট ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন কেল্লায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট মূল্য ১০ টাকা। এ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশ এবং বিমস্টেকভুক্ত রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য টিকিটের মূল্য ২০০ ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য টিকিট বিক্রি হয় ৪০০ টাকা করে।

লালবাগ জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান মো. তানজিুলর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন থেকে আমরা টানা কেল্লা খোলা রাখছি। রোববার ছুটির দিনেও খোলা ছিল জাদুঘর। এভাবে ঈদের ছুটির বাকি দিনগুলোতেও সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে লালবাগ কেল্লা। ঈদের দিন আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত রেখেছিলাম।

দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য ঈদের তুলনায় এবার ঈদুল আজহায় দর্শনার্থীর সংখ্যা একটু কম। কারণ লম্বা ছুটির কারণে অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। ক্রমে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। যারা আসছেন তাদের ভ্রমণটাকে কীভাবে নির্বিঘ্ন করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি। নিরাপত্তার জন্য আমরা নিকটস্থ থানা, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে রেখেছি। আমাদের নিজস্ব কোনো ফোর্স নেই। প্রয়োজনে আমরা থানা পুলিশসহ অন্য সংস্থাগুলোকে ডাকলে তারা আমাদের সহযোগিতায় আসবেন।

কেআই/আরবি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।