ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

টয়লেট থেকে গৃহবধূর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
টয়লেট থেকে গৃহবধূর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক

বাগেরহাট: বাগেরহাটে নিখোঁজ হওয়ার সাতদিন পর টয়লেট থেকে ফিরোজা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  

শনিবার (০৫ আগস্ট) বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার দেওয়ানবাটি এলাকায় নিহতের বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

এর আগে দুপুর দেড়টায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে ওই নারীর স্বামী মোহাম্মাদ আলী হোসেনকে (৩৭) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টা থেকে নিখোঁজ ছিলেন ফিরোজা বেগম। চার দিন পরে বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) নিজের স্ত্রীকে নিখোঁজ দাবি করে বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন  মোহাম্মাদ আলী হোসেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মোহাম্মাদ আলী। পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যার শিকার ফিরোজা বেগম দেওয়ানবাটি গ্রামের গফুর মোল্লা ওরফে ছুইটের মেয়ে। বছর দেড়েক আগে মাত্র দুই দিনের পরিচয়ের সূত্রে শহরের নাগেরবাজার এলাকায় আজিজ মোল্লার ছেলে মোহাম্মাদ আলী হোসেনকে বিয়ে করেন স্বামী পরিত্যক্তা ফিরোজা বেগম। ফিরোজা বেগম মোহাম্মাদ আলী হোসেনের ৩য় স্ত্রী। এই ঘরে তাদের কোনো সন্তান নেই। ১৭ বছর আগে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে এক মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান ফিরোজা বেগম। সেই থেকে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। আলীকে বিয়ে করে, বাবার ঘরের পাশের ঘরে থাকতেন দুজনে। নিহতের প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমা বেগম জামাই রায়হান ব্যাপারীর সঙ্গে ঝালকাঠি থাকেন।

মোহাম্মাদ আলী হোসেন জ্বালানি গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে নিজেকে সাংবাদিক বলেও পরিচয় দিতেন।

নিহতের চাচা বারিক মোল্লা বলেন, রোববার (৩০ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মাদ আলী হোসেন বলেন- আপনাদের মেয়ে চলে গেল। আমি গিয়ে দেখি রাস্তায় কেউ নেই। আলীর কাছে জানতে চাইলে বলে, অনেক দূর চলে গেছে এখন পাবেন না। পরে আসবে হয়ত। এরপর থেকে আর ফিরোজাকে পাইনি। হয়ত ওইদিনই আলী ফিরোজাকে মেরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকে আলী খুব বেপরোয়া ছিল। মাঝে মাঝেই ফিরোজাকে মারধর করত।

প্রথম ঘরের মেয়ে পূর্ণিমা বলেন, চারদিন আগে মোহাম্মাদ আলী হোসেন মোবাইলে ফোন করে জানায় আমার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আসতে চাইলে বলে আসার দরকার নেই। কোথায় জানি গেছে, পাওয়া যাবে। জামাইকে নিয়ে দুপুরে দেওয়ান বাটি আসি। মার ঘরে ঢুকতেই দেখি, টয়লেটের চারপাশে নতুন মাটি এবং দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। সে আমার মাকে মেরে, টয়লেটের মধ্যে রেখেছে। আমি আমার মাকে হত্যার বিচার চাই।

পূর্ণিমা আরও বলেন, বিয়ের পর থেকে মোহাম্মাদ আলী হোসেন আমার মাকে মারধর করত। মা আলীকে দুটো মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছে। আলী মার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেকবার মাকে মেরেছে। একবার প্লাস দিয়ে মার দাঁত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে।

নিহতের মেয়ের জামাই রায়হান ব্যাপারী বলেন, দুপুরে ঘরে ঢুকে কীসের গন্ধ জানতে চাইলে মোহাম্মাদ আলী হোসেন আসতেছি বলে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তখন বুঝতে পারি কিছু একটা ঘটেছে। আলীর পিছনে দৌড় শুরু করি, একপর্যায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু দূর গিয়ে আলীকে ধরে ফেলি। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে আলীকে আটক করে। আমরা আলীর বিচার চাই।

আলী একা এই হত্যা করতে পারেনি দাবি করে রায়হান ব্যাপারি বলেন, আমার শাশুড়ি অনেক মোটা। তাকে মেরে একা টয়লেটের মধ্যে ঢুকানো সম্ভব না। আলীর সঙ্গে অন্য কেউ আছে হয়ত। তদন্ত করে দেখার দাবি করেন তিনি।

আলীর সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে নিহতের চাচা বারিক মোল্লা বলেন, ফিরোজা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেছিল। তখন আলীর সঙ্গে পরিচয় তার। পরিচয়ের দুই-তিনদিনের মধ্যে তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে ফিরোজাকে নিয়ে আমার ভাইয়ের বাড়িতেই থাকত আলী।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমার আলীকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে হত্যার মূল কারণ ও হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।