ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবি, নরসিংদীর সাত যুবক নিখোঁজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবি, নরসিংদীর সাত যুবক নিখোঁজ নিখোঁজ যুবকদের মধ্যে ছয়জন

নরসিংদী: আবারও দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নরসিংদীর সাত যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই জেলার বেলাব উপজেলার বাসিন্দার।

এ খবরে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।  

শনিবার (১২ অগেস্ট) নিখোঁজ হওয়া যুবকদের স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিখোঁজ যুবকরা হলেন- জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটেরচর গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আব্দুল মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০) ও নিলক্ষিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১)।

নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দুই দালাল দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ওই সাতজন।

নিখোঁজ কামাল মিয়ার ছোট ভাই জামাল মিয়া জানান, পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে আমার ভাইকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালির উদ্দেশে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেম ঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় বোটে তুলে ইতালির পথে যাত্রা করে তারা, কিন্তু ৪০ মিনিট পর বোটটি ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে ২০ জনের থেকে ১২ জন ফিরে এলেও আটজন নিখোঁজ রয়ে যায়। এ তথ্য দালাল জাকির হোসেন স্থানীয় মিলন মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের জানায়। এর  মধ্যে আমার ভাইও নিখোঁজ।  

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, আমার ভাই আট মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিল ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে। কিন্তু সেখানে ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়নি ওরা। দুলালকান্দির দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আমার ভাইয়ের কোনো খবর পাচ্ছি না। আমরা আমার ভাইয়ের সন্ধান চাই।

রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, আজ থেকে ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন আমার জন্য দোয়া কইরো। আমরা এখন গেম ঘরে আছি, আগামী বুধবারে ডেঙ্গিতে তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।

এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মেম্বার বলেন, আমি খবর পেয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে  যোগাযোগের চেষ্টা করি। ফোন দিলে মোবাইল অন্য একজন রিসিভ করে আমাকে জানায়, ট্রলারডুবির ঘটনায় জাকির হোসেনের অধীনে থাকা ২০ জনের থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করা হলে ও আটজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে দালাল জাকির হোসেন ও শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তানভীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে এবং লোক মুখে শুনেছি। তবে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, নিখোঁজের সংবাদ লোক মুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। নিখোঁজের বিষয়ে জানতে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এর আগে ২৪ জুন একইভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার একজনের মৃত্যু ও সাতজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।