ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ ব্যাপারে ‘গণতন্ত্র না থাকলেই তো জঙ্গিবাদের উত্থান হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রিজভী বলেন, আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন নিয়ে দুদিন ধরে খুব আলোচনা চলছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘দিল্লির কূটনীতিকরা বলেছেন বাংলাদেশের হাসিনাকে দুর্বল করলে ভারত ও আমেরিকার জন্য সুখকর হবে না। ’
আমি খুবই খুবই বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশ কি স্বাধীন না? আমাদের দেশ তো স্বাধীন দেশ। সার্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক একটি দেশ। তাদের নীতিনির্ধারকরা কীভাবে বলতে পারে একজন অবৈধ ভোটবিহীন প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল করলে তাদের স্বার্থ বিকৃত হবে? আমার মাথায় ধরছে না।
তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র না থাকলে উগ্রবাদের জন্ম নেয়। গণতন্ত্র না থাকলেই তো জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সেটিকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা যদি একদলীয় কোনো রাষ্ট্র বলতো তাহলে হতো। কিন্তু এটা বলেছে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা। তাহলে আমরা কী ভাববো আঞ্চলিকতার আড়ালে আরেকটি কর্তৃত্ববাদের অধীনে আছি? দেশের জনগণ কি এটা ভাববে না? এটাই তো জনগণ ভাববে, মনে করবে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন রিজভী। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ভারতের কূটনীতিকদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, গতকাল (শুক্রবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নম্বর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জিসানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে খোঁজ করতে গিয়ে ছাত্রদলের পাঁচ থেকে ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা গিয়েছিলেন। তাদেরও তুলে নিয়ে গেছে। সবাই জানে, এটা গোয়েন্দারা করেছে। আমরা ওই মাইক্রোবাসের নম্বরও জানি।
কিন্তু তারা এখনো স্বীকার করছে না। রাষ্ট্রের তো এই চরিত্র হওয়ার কথা ছিল না। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রে কেউ কথা বললে অদৃশ্য হয়ে যাবে, এটা হওয়ার কথা ছিল না। আর সেই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে, যে আমার দেশের লোকদের কণ্ঠস্বরকে বন্ধ করতে গলার মধ্যে ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে রেখেছে? সে-ই টিকে থাকবে; একটা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা এটা কীভাবে ভাবতে পারে?
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, তারা কী আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? তারা কী আমাদের সার্বভৌমের বিশ্বাস করে না? সারা দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন জেগে উঠেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। যেমন গতকাল জিসানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনি সারা দেশে এরকম অবস্থা চলছে। এরকম নিশ্চিত অন্ধকারের মধ্যে আমাদেরকে আমাদের পথে চলতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মিলন।
সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের পরিচালনায় বর্তমান সভাপতি এস এম জিলানী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
এমকে/এমএম/এমজে