সাভার (ঢাকা): সাভারে ভাকুর্তা ইউনিয়নে মধ্যরাতে একটি বাড়িতে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে এক কিশোরীর হাত-পা বেঁধে ও মুখে গামছা গুঁজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুধু তাই নয়, যাওয়ার সময় স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে তারা।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী রাজধানীর বসিলা এলাকায় বাশার আইডিয়াল স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে তার বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকে।
সোমবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ভাকুর্তা ইউনিয়নের লুটের চর উত্তরপাড়া গ্রামে এই ধর্ষণ ও লুটের ঘটনা ঘটে।
পরদিন (মঙ্গলবার) দিবাগত গভীর রাতে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় এক সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ভাকুর্তা এলাকায় পরিবারের সবাইকে অচেতন করে লুট ও এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েছি। এঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই বলেন, ঘটনার দিন সবাই রাতের খাবার খাওয়ার পর প্রথমে বাবা অচেতন হয়ে পড়েন। বাবাকে অনেক ডাকাডাকি পরও উনি সাড়া দেন নাই। আমি ভেবেছিলাম বাবা অসুস্থতার জন্য হয়ত ক্লান্ত। পরে ছোট বোনের রুমে গিয়ে দেখি, সেও ক্লান্ত, চোখে ঘুমঘুম ভাব তার। ওদিকে মা বলছিলেন, তারও একই অবস্থা, কেউ হয়ত খাবারে অচেতন হওয়ার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি যেন জেগে থাকতে পারি সে জন্য কফি বানিয়ে পান করি। তারপর আমার রুমে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কখন যেন ঘুমিয়ে যাই। তখন রাত দেড়টার মতো বাজে।
তিনি আরও জানান, পরে সকালে উঠে সব জানতে পারি। আমার বোনের মুখ থেকে শুনেছি, ওরা তিনজন গ্রিলকেটে ঘরে প্রবেশ করে। দুই জন ছিল মধ্য বয়স্ক। তরুণ বয়সের একজন আমার বোনের বেডরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আর দুইজন ওর হাত-পা বেঁধে মুখে রুমাল গুঁজে ধর্ষণ করেছে। আলমারি থেকে ২০ হাজার, আমার মানিব্যাগ থেকে ৫ হাজার, প্রায় দেড় ভরি স্বর্ণালংকার আর দুটি মোবাইল ফোনে নিয়ে গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, হাসপাতালে আমার বোনের অবস্থা বেশি ভালো না। আমার আব্বু-আম্মুকেও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে আমার তো কোনো রিলেটিভ নাই সাহায্য করবে।
পরিকল্পিতভাবে তাদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘৪ বছর আগে সাড়ে চার কাঠা জমি কিনে একতলা বাড়ি করেছি। আমার আব্বু প্রাইভেটকার চালিয়ে অনেক কষ্টে এই বাড়িটা করেছে। কিন্তু আধা কাঠা জমি আমাদের পাশের জায়গার মালিক হাবিবুল্লাহ দখল করে নিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন সময় রাতের বেলা আমাদের নানা ভাবে উৎপাত করা হতো। এ ঘটনায় আমরা মামলা করার পর থেকে তারা আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হতো। এসব ঘটনা থেকে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের পরিবারের ওপর এমন নির্যাতন পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে। ’
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ হাবীব বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। জমি দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একাধিকবার জমি মেপে বিষয়টির সমাধানও করা হয়েছে। এখন অযথাই আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিচ্ছে। আমি চাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এসএফ/এসএএইচ