ঢাকা: আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবনে সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে সৌজন্য সাক্ষাৎ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে সারা বিশ্বে ভোগান্তি হচ্ছে।
যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট খাদ্য-শস্য, সার, জ্বালানি সংকটে আফ্রিকাসহ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে তা বিশেষভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশে অবস্থানের প্রশংসা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ভারসাম্যপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই নীতিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত বন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৮২ সালে ও ২০১৩ সালে তার নিজের রাশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করেন।
দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
প্রধানমন্ত্রী রাশিয়াকে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য-বিনিয়োগ অংশীদার।
তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ আরও কোন কোন পণ্য আমদানি করা যায় রাশিয়া সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে বলে জানান সের্গেই লাভরভ।
এক্ষেত্রে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেন।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়ারও আহ্বান জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বশেষ অগ্রগতি ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।
আসন্ন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রথম ধাপে ‘পারমাণবিক জ্বালানি’ আসবে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিনকে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করায় ধন্যবাদ দেন লাভরভ।
এ সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামোসহ বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার তিন লাখ টন গম আমদানি চুক্তির কথা উল্লেখ করে সারের ব্যাপারেও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে আলাপকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে রাশিয়া সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন।
সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৩
এমইউএম/এসআইএস