বগুড়া: বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) চাঁদাবাজি ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলার একমাত্র আসামি ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে অবশেষে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
আটক সজল কুমার ঘোষ পাবনা জেলার মৃত সুমেন কুমার ঘোষের ছেলে। তবে তার বর্তমান আবাসস্থল বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকায়। তিনি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতি ও বহিরাগত সজল ঘোষের চাঁদাবাজি, নির্যাতন বন্ধে গত ২৯ আগস্ট থেকে লাগাতার বিক্ষোভ করে আসছিলেন আইএইচটির শিক্ষার্থীরা। পরে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী আইএইচটির শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশ সজলকে আটকের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। এর ধারাবাহিকতায় মামলার ১০ দিন পেরোনোর পর আজ সকালে আটক হন সজল কুমার ঘোষ।
আইএইচটির শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলের মিল ম্যানেজার ও শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল ঘোষ। এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দু ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তখন থেকেই ক্লাস বর্জন করে তারা কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পরের দিন তিন দফা উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের আটক ও শাস্তি এবং সব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
পরে ২ সেপ্টেম্বর কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান বাদী হয়ে সজলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হোস্টেলের মিলের অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, সজল ঘোষ আইএইচটির কোনো শিক্ষার্থী নয়। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আইএইচটিতে আসন গেড়ে বসেন। বাগিয়ে নিয়েছিলেন হোস্টেলের ২১৮ নম্বর রুম। হোস্টেলে একমাত্র তার রুম ছিল টাইলস করা। তিনি প্রতিদিন কলেজের গেটের দক্ষিণ পাশে তেঁতুল তলায় বসতেন। কলেজে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের আগে তার সঙ্গে কথা বলতে হতো। না করলেই মারধর করতেন সজল। এ রুমেই সব শিক্ষার্থীরা তার সেবাযত্ন করতেন। মদের আসর বসানো হতো সেখানে। এছাড়া পরীক্ষা, হোস্টেলে ভর্তিসহ নানা অজুহাতে কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা আদায় করতেন। কেউ দিতে গড়িমসি করলেই চলতো নির্যাতন, দিত পরীক্ষায় ফেল করে দেওয়ার হুমকি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টানা ১৩ দিনের আন্দোলনের মুখে সরানো হয়েছে বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) অধ্যক্ষকে। বগুড়া আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে বাগেরহাটের ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বগুড়া আইএইচটির অধ্যক্ষকে বাগেরহাটে বদলি করে মাদারীপুরের ম্যাটসে সংযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয় ৷ একই সঙ্গে বগুড়া আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, সজল ঘোষ শেরপুরের ছনকা বাজারের একটি ঘরে আত্মগোপন করেছিলেন। এই কয়দিন তিনি কোথাও বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতেন। পরে আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
আরএ