বরিশাল: আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরের সভা কক্ষে মহানগর ও সদর উপজেলার পূজা মণ্ডপ কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, বরিশালে আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদ্যাপন করা হয়। আসন্ন সারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুন্দরভাবে উদ্যাপন করা যায় সেই চেষ্টা এবারও আমাদের থাকবে। আশাক রি কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে কোনোভাবেই গুজবে কান দেওয়া যাবে না। আর একটি বিষয় মনে রাখতে হবে ধর্ম যার যার উৎসবটা যেন সবার হয়। আর এটাই যেন আমরা মেনে চলতে পারি।
বিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পূজা মণ্ডপে শুধু পূজা উদ্যাপন কমিটি নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কমিটি করার কথা আমি বলেছি। আর এ কমিটি গঠন হলে আশা করি কোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটি তাৎক্ষণিক মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। আর পূজাকে কেন্দ্র করে মণ্ডপসহ নগরে প্রচুর নারীদের চলাচল থাকে। এক্ষেত্রে টিজিংয়ের মতো কোনো বিষয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকাজুড়ে পোশাকধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। যারা বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা ছাড়াও নৌ-পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
এ বছর বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় এবার চারটি পূজা মণ্ডপ বেড়ে ৮৭টি হয়েছে। যার মধ্যে সাধারণ ক্যাটাগরিতে রয়েছে মাত্র ১৪টি পূজা মণ্ডপ। এছাড়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপ ৩৬টি ও গুরুত্বপূর্ণ ৩৭টি। আর অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ টির মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪ টি থানার মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানার আওতায় রয়েছে সর্বোচ্চ ২৩টি এবং গুরুত্বপূর্ণের মধ্যে এই থানার আওতায় রয়েছে ১১টি। তবে সর্বোচ্চা ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ রয়েছে এয়ারপোর্ট থানার আওতায়।
এ বিষয়ে সভায় পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মন্দির ভেদে ৪, ৬ ও ৮ জন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া এবারের পূজায় সর্বজনীন ৭৮ ও ব্যক্তিগত ৯টি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে ৮৪১ জন। আর যে ৪৯ টি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তার বাইরে থাকা মণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য সভায় বলা হয়েছে। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ সহায়তা করবে।
অপরদিকে চারটি পূজা মণ্ডপে বিরোধ রয়েছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার সভায় তা সমাধানের নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে আতশবাজি ফুটানো নিষিদ্ধের পাশাপাশি সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে সভায় ।
সভায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, পূজাকে ঘিরে মাদক নিয়ন্ত্রণে শুধু পুলিশ নয় সকলকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। কারো ওপর দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে মাদক প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশালে সম্প্রীতি সব সময় ছিল। এই সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রীতি কমিটি গঠনের মাধ্যমে পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক খান আলতাফ হোসেন ভুলু, সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা, বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু, মহানগরের সাবেক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র দে নারু, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুরঞ্জিত দত্ত লিটু, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকারসহ বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বক্তারা সামনে নির্বাচন থাকায় সবাইকে সতর্ক হয়ে পূজা উদ্যাপনের জন্য আহ্বান জানান।
সভায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী, উপ-কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, এসএম তানভীর আরাফাত, মো. আলী আশরাফ ভূঞা, বি.এম আশরাফ উল্যাহ তাহের, র্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক মেজর জাহাঙ্গীর আলম, বিএমপি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. ফজলুল করিম, মো. ফারুক হোসেন, এস.এম. কামরুজ্জামান-পিপিএমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ