ফরিদপুর: জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মাত্র এক মিনিটের স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ে দুইটি ইউনিয়নের অন্তত ৬টি গ্রামের শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঝড়ে উপড়ে পড়েছে কমপক্ষে তিনশতাধিক গাছপালা। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে ওই পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের বাড়ি-এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম, পরিচয় ও তালিকা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদিন ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর সোয়া তিনটার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড় মাত্র এক মিনিটেরও কম সময় স্থায়ী ছিল। তাতেই উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম, বেজিডাঙ্গা ও টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবান, তিতুরকান্দি গ্রামের কাঁচাপাকা বাড়িঘর, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ফসলি জমিও।
সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই সারাদিন ধরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০ থেকে ৩০টি কাচা-পাকা ঘরবাড়ি গাছপালা ভেঙ্গেচুরে উপড়ে ফেলে। এর আগের থেকেই বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে টগরবন্ধ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম বলেন, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করা হয়। টগরবন্ধ ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০টি কাঁচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েকশত গাছপালা ভেঙ্গে উপড়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হাসান বলেন, আলফাডাঙ্গার পুরো উপজেলা নয়। ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়া দুইটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তিনটি খুঁটি ভেঙে পড়ে গেছে। আরও অনেকগুলো আঁকাবাঁকা হয়ে পড়েছে। আমাদের অফিসের লোকজন কাজ করছে। আশা করি, আগামীকালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই উপজেলার ছয়টি গ্রামের প্রায় শতাধিক কাঁচাপাকা বাড়িঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়া কমপক্ষে তিন শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে উদ্ধার কাজ করা হয়। তবে এখন অসম্পূর্ণ রয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক হতে হয়তো তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। তাদের নিরাপদ স্থান ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। পুরো এলাকা জুড়ে অন্ধকার। আগামীকাল সকালে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোসহ তালিকা করা হবে। প্রাথমিকভাবে কারও নাম পরিচয় জানানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। আগামীকাল শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২৩
এসআইএ