ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতারণায় রিজেন্ট সাহেদকেও ছাড়িয়ে সিলেটের বিপ্রজিৎ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
প্রতারণায় রিজেন্ট সাহেদকেও ছাড়িয়ে সিলেটের বিপ্রজিৎ

সিলেট: প্রতারণায় বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমকেও ছাড়িয়ে গেছেন সিলেটের বিপ্রজিৎ গুণ বাবলা। শতাধিক লোকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ডজন ডজন মামলায় ফেরারি তিনি।

 

তবে দেশ ছাড়তে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন এই প্রতারক।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

বিপ্রজিৎ গুণ বাবলা (৪৪) সিলেট মহানগরের মোগলাবাজার থানাধীন আলমপুর এলাকার রবিন্দ্র কুমার গুণের ছেলে।  

গ্রেপ্তারের পর তাকে সিলেটে আনার জন্য মোগলাবাজার থানা পুলিশের একটি টিম রাতেই ঢাকায় রওনা হয় বলে জানা গেছে।

এসএমপির মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, বিপ্রজিৎ গুণ বাবলার বিরুদ্ধে অসংখ্য লোকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা রয়েছে। আমার থানায়ই ৫টি মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি বিপ্রজিৎ। তাই শাহজালাল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে আজ (শুক্রবার) সিলেটে আনা হচ্ছে।     

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপ্রজিৎ গুণ বাবলা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চলাফেরা করতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওঠাবসা এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবং নিজেকে বিরাট ব্যবসায়ী হিসেবে জাহির করে ব্যক্তি জীবনে এক চিকিৎসককে বিয়ে করেছেন।   

তার ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত উচ্চপদস্থ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, সচিব, অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, অসংখ্য চিকিৎসক, আইনজীবীসহ শত মানুষ। অনেককে পথের ফকির করেছেন বাবলা। এসব টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

সিলেটের আদালতে ভুক্তভোগীদের করা কয়েক ডজন মামলা তার ওপর। এরমধ্যে ডজনের ওপর মামলায় আদালত থেকে পরোয়ানাভুক্ত হয়ে ফেরারি ছিলেন বিপ্রজিৎ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চা বাগানসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে উচ্চপদস্থ লোকদের সঙ্গে চলাফেরা দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বিপ্রজিৎ। তার টার্গেট ছিল ডাক্তার, ব্যবসায়ীসহ সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ।

প্রতারণার মাধ্যমে তার আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ ৩০-৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে. সাবেক অ্যাডিশনাল আইজিপি পদ মর্যাদার কর্মকর্তার কোটি টাকা, সিলেটের সাবেক এক পুলিশ কমিশনারের ৯০ লাখ টাকা, সাবেক এক সচিবের ১ কোটি ৪ লাখ টাকা ও সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সিলেটের দুই ডজনের ওপর চিকিৎসক, আইনজীবী, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, এয়ারপোর্টের এভিয়েশন কর্মকর্তাসহ শতাধিক লোকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বিপ্রজিৎ বাবলার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার এলাকা আলমপুরের একাধিক লোককে ঠকিয়ে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন।       

এসএমপির সাবেক কমিশনারের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০২১ সালে তাকে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন তার ভাই ও আয়কর আইনজীবী আরেক স্বজনের মাধ্যমে পাওনা ৯০ লাখের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে ছুটে আসেন।  

এরপর গা ঢাকা দিলে এসএমপির সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তার টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আয়কর আইনজীবী বলেন, ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে, বিপ্রজিৎ বাবলা ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। এ কারণে আদালতে তার বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টের ৫টি মামলা করেন। এরমধ্যে ৩টি মামলা ওয়ারেন্ট তামিলের পর্যায়ে।

বিপ্রজিতের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জায়গা দেওয়ার কথা বলে বিপ্রজিৎ ৩টি চেকের বিপরীতে তার ১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ঘটনায় ৫টি মামলা করেছেন। এভাবে অসংখ্য লোক বিপ্রজিতের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টের মামলা করেছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বিপ্রজিত গুণ বাবলা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের (ইকে ৫৮৩) ফ্লাইট যোগে গোপনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুবাই পালাতে চেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে এসএমপির ৩ থানায় ৯টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। কোতোয়ালী সিআর ৩৩৭/২০২৩, ১৭২৪/২০২২ ও ৬৭০/২০২৩, মোগলাবাজার থানা সিআর ১৫৭/২০২৩,১৪৭/২০২৩ ও ১৪৮/২০২৩। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা থানায় সিআর-১৫৭/২৩, ১৪৮/২৩ এবং ১৪৭/২০২৩ গ্রেপ্তরি পরোয়ানা তামিলের জন্য রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।