ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সহিংসতার দায় কি বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন, প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
সহিংসতার দায় কি বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন, প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার দুপুরে তার দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীতে গত শনিবারের (২৮ অক্টোবর) সহিংসতার দায় বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, বিএনপি নেতারা মঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ—এগুলোর দায় কি বিএনপির নেতারা এড়াতে পারেন? কেননা তারা মঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনায় যারা ঢুকেছে সিসি ক্যামেরা দেখে তাদের চিহ্নিত করে মামলা হবে। পুলিশকে পিটিয়ে হত্যার জন্য মামলা হবে। হাসপাতালে হামলার ঘটনায় মামলা হবে। গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায়ও মামলা হবে। আমার জানা মতে, শখানেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের ওপরও হামলা হয়েছে।  

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করতে চাইলে তা নেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।  

বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সহিংসতা যখন হচ্ছিল তখন সিনিয়র নেতারা (নয়াপল্টনে) মিটিং করছিলেন। তাদের ডিএমপি কমিশনার বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন; মহাসমাবেশের সীমানা কতোদূর হবে, তারা জানিয়েছিলেন—নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও যে সহিংসতা হয়েছে, সেটির দায় কি বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন?

এখন পর্যন্ত কতটি মামলা হয়েছে, সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলা তো শুরু হয়েছে। মামলা অনেকেই দেবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা মামলা দেবে। সাংবাদিকরা মামলা দেবে। পুলিশ হাসপাতাল মামলা দেবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা মামলা দেবে। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে যেগুলো দেওয়ার সে মামলা দেবে। মামলা শুরু হয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তাদের নামে মামলা দেব। এই মুহূর্তে আমার কাছে এ তথ্য নেই। আমি আপনাদের পরে জানাতে পারবো।

আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনা অনেক ঘটেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়ি অ্যাটাক করেছেন, বাড়িতে ঢুকে গিয়েছেন, এ মামলা তো হবেই। আমরা শনাক্ত করছি, যারা যারা এখানে ঢুকেছিলেন, যার যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যারা অগ্নিসংযোগ করেছেন, এখানে যারা গাড়ি পুড়িয়েছেন তাদের নামে মামলা হবে। যতগুলো গাড়ি পুড়িয়েছেন, এস আলমের একটি গাড়ি পুড়িয়েছে তার মামলা হবে। পুলিশ হাসপাতালে যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তাদের নামে মামলা হবে। পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। আরেকজন পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন, তিনিও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। দুইজন আনসার সদস্য মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আমার জানা মতে শতাধিক পুলিশ সদস্য বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আনসার বাহিনী হাসপাতালে রয়েছে। আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের তারা পিটিয়েছেন, গায়ে হাত তুলেছেন; তারাও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তো মনে করি আপনারা (সাংবাদিক) সে ব্যাপারে সোচ্চার হবেন, যেসব সাংবাদিক আহত হয়েছেন তারা নিশ্চয়ই সোচ্চার হবেন এবং মামলা দেবেন, আমরা সব মামলা নেব।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যাদের আটক করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কোনো মামলায় আটক করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা মিটিং করছিলেন। যখন মিটিংয়ে বসেছিলেন তখনই ঘটনগুলো ঘটছে। তাহলে এর দায় কি তারা এড়াতে পারেন? প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ হলো, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? পুলিশ নিহত হলেন, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? পুলিশের তিনটি অস্ত্র তারা জোর করে নিয়ে গেছে, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? তারা মিটিং করেছেন যারা উসকানি দিয়েছেন, বলেছেন কালকে থেকে লাগাতার ওমুক-তমুক এই সমস্ত করে জনতাকে উত্তেজিত করেছেন, এই দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? এটা বিচার বিভাগ দেখবেন, আমরা তাদের সম্মুখে নিয়ে যাচ্ছি। আইন অনুযায়ী বিচার বিভাগ দেখবে।

শনিবার বিএনপি নাশকতা করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, তারা গাড়ি পোড়াবে, মানুষ মারবে এ ধরনের বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা কি বিশ্বাস করতে পারি একটি সভ্য মানুষ একজন পুলিশকে হত্যা করবে? তারা কতখানি নৃশংস, কতখানি বর্বর।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারাই (বিএনপি) এ সমস্ত নাশকতা করে, সহিংসতার বিস্তার করার জন্য ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি কীভাবে মানুষ পুড়িয়েছে। এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে আমরা জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনী ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে। আবার তারা হরতালের ডাক দিয়েছে। আহত হলো পুলিশ, ক্ষতিগ্রস্ত হলো মানুষের গাড়ি-ঘোড়া, আর হরতাল ডাকে বিএনপি! যারা নিজেরাই এই ঘটনাটা ঘটালো, তারাই আবার হরতাল ডাকে!

তিনি বলেন, আবার বিদেশি একজন নাকি এসে তাদের সমর্থন করছে, আমরা এই বিদেশির পরিচয় জানি না। তিনি একজন আমেরিকান, তার সঙ্গে নাকি জো বাইডেনের সরাসরি কথা হয়, তিনি এগুলো বলেছেন। বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে তিনি গোপন বৈঠক করেছেন। তাকেও জিজ্ঞাসা করি, তিনি কীভাবে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিলেন? তিনি কে, তিনি যদি উপদেষ্টা হয়ে থাকেন তাহলে আমার প্রশ্ন রয়েছে। পররাষ্ট্রের যে নীতি-নৈতিকতা, কতখানি লঙ্ঘন করেছেন, সেখানেও আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।

যে ছাত্রদল নেতার আঘাতে পুলিশ মারা গেছে, তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি কেন, এ প্রশ্নে কামাল বলেন, গ্রেপ্তার অভিযান আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যামেরা কিছু ভেঙে ফেলেছে, অকার্যকর করে দিয়েছে, তারপরও আমাদের অনেক ধরনের ক্যামেরা ছিল, ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা যাদের চিহ্নিত করব তাদের আমরা অবশ্যই আইনের হাতে সোপর্দ করব। যিনি এটা ঘটিয়েছেন (পুলিশকে মেরে আহত করেছেন) তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন, পেটালেন পুলিশকে আবার তিনিই অসুস্থ হয়ে গেলেন! আমরা এতগুলো ভিডিও দেখে দেখলাম, সমাবেশ শেষ হওয়ার আগে কোনো পুলিশ সেখানে যায়নি, কোনো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীও সেখানে বাধা দেওয়ার জন্য যায়নি।

এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল, আমরা তাদের কিছু বলিনি। আমরা সবই ধৈর্য্যসহকারে মোকাবিলা করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
জিসিজি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।